আপনি কি মাধ্যমিকের বাংলা প্রশ্নপত্রের উত্তর খুঁজছেন? এই আর্টিকেলে আপনি পাবেন ২০২৪ সালের মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্রের সঠিক উত্তর।
নিচে ২০২৪ সালের প্রশ্নপত্রের প্রতিটি উত্তর সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য আগের বছরের প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
MadhyamikQuestionPapers.com ২০১৭ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং উত্তর বিনামূল্যে আপলোড করেছে।
Download 2017 to 2024 All Subject’s Madhyamik Question Papers
View All Answers of Last Year Madhyamik Question Papers
যদি দ্রুত প্রশ্ন ও তার উত্তর খুঁজতে চান, তাহলে নিচের Table of Contents এর পাশে থাকা [!!!] এই চিহ্নটিতে ক্লিক করুন। এই পেজে থাকা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর Table of Contents এ ক্রমানুসারে দেওয়া আছে। যে প্রশ্নের ওপর ক্লিক করবেন, সরাসরি তার উত্তরে চলে যেতে পারবেন।
Table of Contents
Toggle১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো:
১.১ নকল পুলিশ সেজে হরিদা মাস্টারমশায়ের কাছ থেকে কত ঘুষ নিয়েছিলেন?
(ক) চার আনা
(খ) আট আনা
(গ) এক টাকা
(ঘ) দু’টাকা
উত্তর: (খ) আট আনা
১.২ “লল্লাটের লেখা তো খণ্ডাবে না।” বক্তা কে?
(ক) জগদীশ বাবু
(খ) রাম দাস
(গ) গিরীশ মহাপাত্র
(ঘ) অপূর্ব
উত্তর: (গ) গিরীশ মহাপাত্র
১.৩ পান্নালাল প্যাটেল কোন্ ভাষার লেখক ছিলেন?
(ক) পাঞ্জাবি
(খ) মারাঠি
(গ) গুজরাতি
(ঘ) হিন্দি
উত্তর: (গ) গুজরাতি
১.৪ “আমাদের শিশুদের শব ছড়ানো রয়েছে!”
(ক) কাছে
(খ) দূরে
(গ) অনেক দূরে
(ঘ) কাছে দূরে
উত্তর: (ঘ) কাছে দূরে
১.৫ “ক্ষুরের দাপট তারায় লেগে উল্কা ছুটায়।”
(ক) পাষাণ স্তূপে
(খ) নীল খিলানে
(গ) গগন তলে
(ঘ) ঝড় তুফানে
উত্তর: (খ) নীল খিলানে
১.৬ “যথা বৃহন্নলারূপী কিরীটী,” ‘কিরীটী’ হলেন
(ক) কার্তিক
(খ) ভীম
(গ) অর্জুন
(ঘ) রাবণ
উত্তর: (গ) অর্জুন
১.৭ খাগের কলম কখন দেখা যায়?
(ক) হাতেখড়ির সময়
(খ)সরস্বতী পূজার সময়
(গ) হালখাতার সময়
(ঘ) নববর্ষের সময়
উত্তর: (খ)সরস্বতী পূজার সময়
১.৮ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার একটি প্রধান বাধা হল-
(ক) বাংলা ভাষার প্রতি অনীহা
(খ) ইংরেজির প্রতি আকর্ষণ
(গ) বাংলা পারিভাষিক শব্দ কম
(ঘ) বাংলা পারিভাষিক শব্দ বেশি
উত্তর: গ) বাংলা পারিভাষিক শব্দ কম
১.৯ শেষ পর্যন্ত নিবের কলমের মান মর্যাদা কে একমাত্র বাঁচিয়ে রেখেছিলেন?
(ক) অন্নদাশঙ্কর রায়
(খ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
(গ) নিখিল সরকার
(ঘ) সত্যজিৎ রায়
উত্তর: (ঘ) সত্যজিৎ রায়
১.১০ ‘নমি পুত্র পিতার চরণে, নিম্নরেখ পদটি হল-
(ক) কর্তৃকারক
(খ) সম্বন্ধপদ
(গ) সম্বোধনপদ
(ঘ) কর্মকারক
উত্তর: (খ) সম্বন্ধপদ
১.১১ সূর্য উঠলে পদ্ম ফোটে। ‘সূর্য’ হল-
(ক) অনুক্ত কর্তা
(খ) উক্ত কর্তা
(গ) নিরপেক্ষ কর্তা
(ঘ) উপবাক্যীয় কর্তা
উত্তর: (গ) নিরপেক্ষ কর্তা
১.১২ ‘শাপমুক্ত’ সমস্তপদটির সমাসের নাম
(ক) করণ তৎপুরুষ
(খ) অপাদান তৎপুরুষ
(গ) অধিকরণ তৎপুরুষ
(ঘ) কর্ম তৎপুরুষ
উত্তর: (খ) অপাদান তৎপুরুষ
১.১৩ ‘শিশুর শরীর কুসুমের মতো কোমল।’ এই বাক্যে ‘কোমল’ হল
(ক) উপমান
(খ) উপমেয়
(গ) উপমিত
(ঘ) সাধারণ ধর্ম
উত্তর: (ঘ) সাধারণ ধর্ম
১.১৪ ‘আই.পি.এল শুরু হল, যারা কলকাতার সমর্থক তারা উৎসাহী হয়ে উঠেছে।’ গঠন অনুসারে বাক্যটি
(ক) সরল বাক্য
(খ) জটিল বাক্য
(গ) যৌগিক বাক্য
(ঘ) মিশ্র বাক্য
উত্তর: (ঘ) মিশ্র বাক্য
১.১৫ নির্দেশক বাক্যের একটি শ্রেণি হল
(ক) প্রশ্নবাচক বাক্য
(খ) শর্তসাপেক্ষ বাক্য
(গ) সন্দেহবাচক
(ঘ) নঞর্থক বাক্য
উত্তর: (ঘ) নঞর্থক বাক্য
১.১৬ ক্রিয়ার সঙ্গে কর্তার পুরুষবাচক বিভক্তি যুক্ত হয়-
(ক) কর্তৃবাচ্যে
(খ) কর্মবাচ্যে
(গ) ভাববাচ্যে
(ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্যে
উত্তর: (ক) কর্তৃবাচ্যে
১.১৭ ‘কাল থেকে সে আনন্দ করছে।’ ‘কাল থেকে তার আনন্দ করা হচ্ছে।’এখানে যে বাচ্যান্তর ঘটেছে তা হল–
(ক) কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্য
(খ) ভাববাচ্য থেকে কর্মবাচ্য
(গ) কর্মবাচ্য থেকে ভাববাচ্য
(ঘ) কর্তৃবাচ্য থেকে কর্মবাচ্য
উত্তর: (ক) কর্তৃবাচ্য থেকে ভাববাচ্য
২। কমবেশি ২০টি শব্দে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
২.১ নীচের যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.১.১ “ভালো হবে না বলছি।” কোন্ কথার পরিপ্রেক্ষিতে বক্তার এমন উক্তি?
উত্তর: ছোটমাসি তপনের লেখা গল্পটি অন্য কোনো জায়গা থেকে ‘টুকলিফাই’ করেছে কিনা সেকথা বলার পরিপ্রেক্ষিতে এই উক্তি।
২.১.২ “এবার মারি তো গন্ডার, লুটি তো ভান্ডার।” কথাগুলো কে কাদের বলেছিলেন?
উত্তর: এই কথাগুলি হরিদা, তার কাছে আড্ডা দিতে আসা ছেলেদেরকে বলেছিলেন।
২.১.৩ “মিথ্যেবাদী কোথাকার!” উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে কেন মিথ্যাবাদী বলা হয়েছে?
উত্তর: উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ গিরিশ মহাপাত্রের হাতে গাঁজা খাওয়ার সমস্ত লক্ষণ বর্তমান ছিল, কিন্তু সে বলেছিল যে সে নিজে খায় না, কিন্তু অন্য কেউ খাবো বললে সেজে দেয়।
২.১.৪ “আরও বেশি অপরিচিত মনে হইল।”- উদ্দিষ্টকে ‘বেশি অপরিচিত’ মনে হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: পাঁচদিন আগের পঙ্কিল নদীটি জলপুষ্ট হয়ে ফুলে ফেঁপে চঞ্চল বেগে ছুটে চলায় তাকে ‘বেশি অপরিচিত’ মনে হয়েছিল।
২.১.৫ “এসো, আমরা কুস্তি লড়ি।” কে, কার সঙ্গে কুস্তি লড়তে চেয়েছিল?
উত্তর: ইসাব অমৃত-এর সঙ্গে কুস্তি লড়তে চেয়েছিল।
২.২ নীচের যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.২.১ “সিন্ধুতীরে দেখি দিব্যস্থান।” ‘দিব্যস্থান’ কেমন ছিল?
উত্তর: সমুদ্রের তীরে পাহাড়ের নিচে দুঃখ-ক্লেশহীন, মনোরম, সত্যধর্ম এবং সদাচারবিশিষ্ট স্থান ছিল দিব্যপুরী।
২.২.২ “ঘাস জন্মালো রাস্তায়” কখন রাস্তায় ঘাস জন্মালো?
উত্তর: অসুখী একজন কবিতায় কথক তার প্রিয়তমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর যখন দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হল এবং বৃষ্টির জলে ধুয়ে দিল কথকের শেষ পদচিহ্ন, তারপরেই রাস্তায় ঘাস জন্মালো।
২.২.৩ “কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে।” আলোর কৃপণতার কারণ কী?
উত্তর: আলোর কৃপণতার কারণ -আফ্রিকা ঘন জঙ্গলে ঢাকা, তাই সেখানে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে না।
২.২.৪ “নাদিলা কর্বুরদল হেরি বীরবরে,” – কর্বুরদল শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: কর্বুরদল কথাটির অর্থ হল রাক্ষসদল।
২.২.৫ “পৃথিবী হয়তো গেছে মরে” পৃথিবী সম্পর্কে এমন বলার কারণ কী?
উত্তর: চারিদিকে যুদ্ধ আর মানুষের মৃত্যু দেখে কবি পৃথিবীর অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একথা বলেছেন।
২.৩ নীচের যে-কোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.৩.১ “ইতিহাসে ঠাঁই কিন্তু তার পাকা।” ইতিহাসে কার পাকা ঠাঁই?
উত্তর: ইতিহাসে কলমের পাকা ঠাঁই।
২.৩.২ অবিখ্যাত লেখকের বৈজ্ঞানিক রচনা প্রকাশের আগে কী সতর্কতা নেওয়া উচিত?
উত্তর: অবিখ্যাত লেখকের বৈজ্ঞানিক রচনা প্রকাশের আগে কোনো অভিজ্ঞ লোককে দিয়ে যাচাই করিয়ে নেওয়া দরকার।
২.৩.৩ “তার ফলে তাঁদের চেষ্টা অধিকতর সফল হয়েছে।” ‘তার ফলে’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নিযুক্ত পরিভাষা সমিতিতে বিভিন্ন বিষয়ের গুণীজন একযোগে কাজ করেছিলেন। ‘তার ফলে’ বলতে এই বিশেষ প্রচেষ্টার কথা বলা হয়েছে।
২.৩.৪ একসময়ে বিদেশে উন্নত ধরনের নিব বের হয়েছিল কীভাবে?
উত্তর: গরুর শিং অথবা কচ্ছপের খোল কেটে বিদেশে উন্নত ধরনের নিব বের হয়েছিল।
২.৪ নীচের যে-কোনো আটটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.৪.১ বাংলায় কী দেখে কারক নির্ণয় করা হয়?
উত্তর: বাংলা ব্যাকরণে বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াপদের সঙ্গে নামপদের সম্পর্ক দেখে কারক নির্ণয় করা হয়।
২.৪.২ মুখ্য কর্মের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: রনি আমাকে একটি বই দিল- এখানে বই হল মুখ্য কর্ম।
২.৪.৩ ‘ঋষিবালক’ পদটির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো।
উত্তর: যিনি ঋষি তিনিই বালক- সাধারণ কর্মধারয় সমাস।
২.৪.৪ নীচের ব্যাসবাক্যটি সমাসবদ্ধ করে তার শ্রেণি নির্ণয় করো ‘অন্ধ করে যে’-
উত্তর: অন্ধকার (উপপদ তৎপুরুষ সমাস)
২.৪.৫ ‘সংগ্রহ করেছিল দুর্গমের রহস্য।’ জটিল বাক্যে রূপান্তর করো।
উত্তর: যেটি সংগ্রহ করেছিল সেটি হল দুর্গমের রহস্য।
২.৪.৬ ‘আমি ছিলাম কালিকলমের ভক্ত।’ বাক্যটিকে প্রশ্নসূচক বাক্যে রূপান্তর করো।
উত্তর: আমি কি কালিকলমের ভক্ত ছিলাম না?
২.৪.৭ ‘এসো যুগান্তের কবি।’ ভাববাচ্যে পরিণত করো।
উত্তর: যুগান্তের কবির আসা হোক।
২.৪.৮ কর্মবাচ্যের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: পুলিশ দ্বারা চোরটি ধৃত হইল।
২.৪.৯ যোগ্যতাহীন বাক্যের একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: হাতি আকাশে ওড়ে।
২.৪.১০ কোন্ সমাসে দুটি বিজাতীয় সমস্যমান পদের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়?
উত্তর: রূপক কর্মধারয় সমাসে দুটি বিজাতীয় পদের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়।
৩। প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কমবেশি ৬০ শব্দে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
৩.১ নীচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৩.১.১ “এই সুখবরে তারা সব খুশি হয়ে গেল।” কারা, কেন খুশি হয়েছিল?
উত্তর: এখানে অপূর্ব সেই হিন্দুস্থানের লোকজনদের কথা উল্লেখ করেছেন যারা তার সাথে স্টেশনে ঘটে যাওয়া অন্যায়ের সময় উপস্থিত ছিল, তারা খুশি হয়েছিল।
তাদের খুশির কারণ ছিল অপূর্বর শারীরিক অবস্থার গুরুতর ক্ষতি না হওয়া। অপূর্ব একটি বিদ্বেষপূর্ণ এবং অপমানজনক পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল, যেখানে তাকে প্ল্যাটফর্ম থেকে জোরপূর্বক লাথি মেরে বের করে দেয়া হয়। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে স্টেশনমাস্টার কেবল তাকে “দেশি লোক” হিসেবে অপমান করে স্টেশন থেকে কুকুরের মতো বের করে দেয়। তবুও, হিন্দুস্থানের লোকজন কোনো প্রতিবাদ না করে, বরং অপূর্বর গুরুতর শারীরিক ক্ষতি না হওয়ার বিষয়টি শুনে স্বস্তি প্রকাশ করে।
৩.১.২ “এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা।” কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: “এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা- ঘটনাটি ছিলো, তপনের স্কুলের ছুটি ফুরিয়েছে, রীতিমতো পড়া শুরু হয়েছে। প্রথম গল্পটি সম্পর্কে একেবারে আশা ছাড়া হয়ে গেছে তপন, বিষণ্ণ মন নিয়ে বসে আছে এমন সময় ছোটোমাসি আর মেসো একদিন বেড়াতে এল, এবং মেসোর হাতে ছিল এক সংখ্যা ‘সন্ধ্যাতারা’।
৩.২ নীচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৩.২.১ “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম” কে কাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন?
উত্তর: পাবলো নেরুদার ‘ অসুখী একজন ‘ কবিতা থেকে গৃহীত অংশে কথক তাঁর প্রিয় নারীকে অপেক্ষায় রেখে নিজ বাসভূমি ছেড়ে দূরে চলে গিয়েছিলেন । স্বদেশ ছেড়ে দূর থেকে দূরতর কোনো স্থানে চলে যাওয়ার সময় তিনি দরজায় তাঁর অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে যান কোনো এক প্রিয়জনকে । যদিও সে জানত না যে কবি আর কখনও ফিরে আসবে না । কবি এক চিরকালীন বিদায় মুহূর্তের ছবি এঁকেছেন।
৩.২.২ “দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু-চাঁদের কর “দিগম্বর কে? উদ্ধৃতিটির অর্থ কী?
উত্তর: কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রলয়োল্লাস কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে ‘ দিগম্বর ‘ বলতে দেবাদিদেব মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে ।
উদ্ধৃতিটির অর্থ: শিবের জটায় পবিত্র চন্দ্রের অধিষ্ঠান। পুরাণ মতে তেজস্বিনী গঙ্গা যখন স্বর্গলোক থেকে পৃথিবী ধ্বংসের জন্য আসেন, তখন মহাদেব তা নিজ জটায় ধারণ করেন। এর অর্থ মহাদেবের জটায় একাধারে ধ্বংস এবং চন্দ্রের আলোকোজ্জল পবিত্র স্নিগ্ধতা সহাবস্থান করে। আজ যখন নবযুগের বার্তায় পৃথিবী উল্লাসিত, প্রাচীন ধারণার অবসান আসন্ন, সেই সময় মানুষের মনের অবস্থা বোঝাতে কবি এই উপমা ব্যবহার করেছেন।
৪। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৪.১ “এমন সৌভাগ্যকে অপূর্বর মন যেন গ্রাহ্যই করিল না।” এখানে কোন ঘটনার ইঙ্গিত করা হয়েছে? তাকে ‘সৌভাগ্য’ বলা হল কেন?
উত্তর: এখানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “পথের দাবী” উপন্যাসের একটি ঘটনার ইঙ্গিত করা হয়েছে। ঘটনাটি হলো সব্যসাচী মল্লিক নামের একজন পলিটিক্যাল সাসপেক্ট (রাজনৈতিক সন্দেহভাজন ব্যক্তি) পুলিশের নজর এড়িয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পুলিশ অনেক চেষ্টা করেও তাকে ধরতে পারেনি। সেই সময় পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে গিরীশ মহাপাত্র নামে এক ব্যক্তির ওপর, যার অদ্ভুত সাজপোশাক এবং চালচলন অনেকের কাছেই সন্দেহজনক মনে হয়েছিল।
এই ঘটনাকে ‘সৌভাগ্য’ বলা হয়েছে কারণ সব্যসাচীর মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লবী ধরা পড়েনি। তার মতো ব্যক্তির ধরা পড়া মানে ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য একটি বড়ো ক্ষতি। কিন্তু পুলিশের অসতর্কতা এবং গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত আচরণ পরিস্থিতি এমন জটিল করে তুলেছিল যে সব্যসাচী নিরাপদে পালাতে পেরেছিলেন। এটি অপূর্বর জন্য সৌভাগ্যের কারণ, কারণ সে মনে মনে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল এবং চেয়েছিল তারা সফল হোক।
তবে, অপূর্বর মন এই সৌভাগ্যকে যেন গ্রাহ্যই করল না। তার মধ্যে একধরনের অস্থিরতা ও চিন্তা বিরাজ করছিল। এই ঘটনাটি তার মনে স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনা এবং সংগ্রামীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এক গভীর দুশ্চিন্তার জন্ম দেয়।
এইভাবে, সব্যসাচীর পালিয়ে যাওয়া একটি সৌভাগ্যের ঘটনা হলেও অপূর্বর মনে এই সাফল্য কোনো স্বস্তি এনে দিতে পারেনি। বরং তার মনে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ এবং দেশের স্বাধীনতা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছিল।
৪.২ “বড়ো চমৎকার আজকে এই সন্ধ্যার চেহারা।”- ‘এই সন্ধ্যার’ পরিচয় দাও। সে দিনের সন্ধ্যার ঘটনাটি বর্ণনা করো।
উত্তর: ‘আজকে এই সন্ধ্যা’ বলতে ছেলেরা যেদিন জগদীশবাবুর বাড়ি ‘স্পোর্টের চাঁদা’ নিতে গিয়েছিলেন, সেই সন্ধ্যার কথা বলা হয়েছে। ঐ দিন সন্ধ্যা ছিল স্নিগ্ধ – শান্ত এবং চারিপাশে ছিল চন্দ্রালোকের উজ্জ্বলতা। ফুরফুরে বাতাস বইছিল এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জগদীশবাবুর বাড়ির বাগানের সব গাছের পাতাও ঝিরি-ঝিরি শব্দ করছিল। বাড়ির বারান্দায় জগদীশবাবু বসেছিলেন, সেই বারান্দায় মস্ত বড় একটি আলো জ্বলছিল। সেই আলোর ma কাছে একটি চেয়ারে বসেছিলেন জগদীশবাবু।
৫। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৫.১ “আমরা ভিখারি বারোমাস।” কোন পরিস্থিতিতে ‘আমরা’ বারোমাস ভিখারি? এই অবস্থায় কী দরকার বলে কবি মনে করেন?
উত্তর: শঙ্খ ঘোষ রচিত “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতায় কবি বলেছেন, “আমরা ভিখারি বারোমাস”। এখানে কবি সমাজের সংকীর্ণতা, বিচ্ছিন্নতা এবং স্বার্থপরতার কারণে মানুষের অবস্থা ব্যাখ্যা করেছেন। কবির মতে, আমরা নিজেদের মধ্যে ঐক্য ও সহযোগিতা না থাকায় সবসময় দুর্বল হয়ে পড়েছি এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে ভিখারির মতো হয়ে গেছি। সমাজের বিভিন্ন বিভেদ, হিংসা ও অনৈক্য আমাদের চিরকালীন দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
এই অবস্থায় কবি মনে করেন, ঐক্যবদ্ধ হওয়া ও একে অপরের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি আহ্বান জানান, সকলে যেন নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে একত্রিত হয় এবং ভালোবাসা ও সহানুভূতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকে। সমাজের উন্নতির জন্য ঐক্য এবং পারস্পরিক সহযোগিতা জরুরি। কবির ভাষায়, “বেঁধে বেঁধে থাকা” আমাদের একমাত্র পথ, কারণ ঐক্যই শক্তি এনে দেয় এবং সমস্ত দুর্যোগ ও সমস্যার সমাধান করতে পারে।
সুতরাং, কবি মনে করেন সংকীর্ণতা ত্যাগ করে ঐক্যের মাধ্যমে আমাদের সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত, তবেই বারোমাসের এই ভিখারির অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৫.২ “পঞ্চকন্যা পাইলা চেতন।”- ‘পঞ্চকন্যা’ কারা? কার চেষ্টায় কীভাবে পঞ্চকন্যা চেতনা ফিরে পেল?
উত্তর: আরাকান রাজসভার শ্রেষ্ঠ কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্যের অন্তর্গত ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতা থেকে প্রদত্ত অংশটি নেওয়া হয়েছে।
যে অচেতন পঞ্চকন্যার কথা বলা হয়েছে তাঁরা হলেন সিংহল রাজকন্যা তথা চিতোর রাজ রন্তসেনের পত্নী পদ্মাবতী ও তাঁর চারজন সখী, চন্দ্রকলা, বিজয়া, রোহিনী এবং বিধুন্নলা।
সিন্ধুতীরে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা অপরূপা কন্যাসহ তার চার সখীকে পঞ্চকন্যা বলে অভিহিত করা হয়েছে। সমুদ্র কন্যা পদ্মা সিন্ধুতীরে পড়ে থাকা ভেলা মধ্যস্থ পঞ্চকন্যাকে উদ্ধার করেন। তাদের চেতনা ফেরানোর জন্য পদ্মা সর্বপ্রথম নিরঞ্জন-এর কাছে প্রার্থনা করেন। সেই সঙ্গে চলতে থাকে উপযুক্ত চিকিৎসার আয়োজন। পদ্মার নির্দেশে সখীরা পঞ্চকন্যাকে নববস্ত্রে ঢেকে উদ্যান মাঝে নিয়ে যান। সেখানে আগুনের শেক দিয়ে এবং তন্ত্র-মন্ত্র ও মহৌষধি প্রয়োগ করে দণ্ড চারেক অক্লান্ত সেবা-শুশ্রূষার পর কন্যা চেতনা ফিরে পায়।
৬। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৬.১ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনার সমস্যাগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার পথে সম্ভাব্য বাধা সম্পর্কে রাজশেখর বসু তাঁর ‘ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ‘ প্রবন্ধে আলোচনা করেছেন । বাধাগুলি
প্রথমত: ইংরেজি জানেন এবং ইংরেজিতে বিজ্ঞান পাঠ করেছেন এমন পাঠকের বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা বেশ কঠিন ।
দ্বিতীয়ত: বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ও কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও উপযুক্ত পারিভাষিক শব্দের অভাব এ পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
তৃতীয়ত: পাশ্চাত্য দেশগুলির তুলনায় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বিজ্ঞানবোধ খুবই কম । সামান্য বিজ্ঞানবোধ না থাকলে বিজ্ঞানভিত্তিক রচনা বোধগম্য হয় না । তাই বাংলায় বিজ্ঞান রচনার ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে গেছে ।
চতুর্থত: অনেক লেখকের ভাষা আড়ষ্টতা ও ইংরেজির আক্ষরিক অনুবাদ দোষে দুষ্ট হয়ে রচনা তার সাবলীলতা হারায় ।
পঞ্চমত: অনেকে পারিভাষিক শব্দ বাদ দিয়ে রচনাকে সহজবোধ্য করার ভাবনা ভাবলেও তা বাস্তবতা পায়নি । > ষষ্ঠত , উপমা ও রূপক ছাড়া অন্যান্য অলংকার বিজ্ঞানভিত্তিক রচনার গুরুত্বকে লঘু করে দেখায় ।
সপ্তমত: শেষ বাধাটি হল ভুল তথ্য পরিবেশন । অনেকে না – জেনে কিংবা সামান্য জেনে বাংলায় বিজ্ঞান রচনায় ভুল তথ্য পরিবেশন করেন । প্রাবন্ধিকের মতে , আলোচিত বাধাগুলি অতিক্রম না করতে পারলে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা ত্রুটিহীন হওয়া সম্ভব নয় ।
৬.২ “সব মিলিয়ে লেখালেখি রীতিমতো ছোটোখাটো একটা অনুষ্ঠান।”- লেখালেখি ব্যাপারটিকে একটা ছোটোখাটো অনুষ্ঠান বলা হয়েছে কেন বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: আলোচ্য উদ্ধৃতাংশটি ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে । লেখক শ্রীপান্থ তাঁর কিশোর বয়সের লেখাপড়া বিষয়ে উপরিউক্ত মন্তব্যটি করেছেন ।
লেখক গ্রামের ছেলে ছিলেন বলে লেখাপড়ার প্রথম জীবনে ফাউন্টেন পেন হাতে পায়নি । বাঁশের কঞ্চির কলম ব্যবহার করতেন । যে কলম তিনি নিজের হাতে তৈরি করতেন । কলমের কালিও তাঁকে তৈরি করে নিতে হত । কলমের মুখটা সূঁচালো করে কেটে আবার মাঝখান দিয়ে চিরে দিতেন । দোয়াতের কালিতে কলম ডুবিয়ে ডুবিয়ে লিখতেন । কালি তৈরীর জন্য বাড়ির রান্নার কড়াই -এর তলার কালি লাউ পাতা দিয়ে ঘষে তুলে পাথরের বাটিতে জলে গুলে নিতেন । কালি বেশি ভালো করার জন্য অর্থাৎ যাতে দীর্ঘক্ষণ লেখা স্থায়ী থাকে তার জন্য আতপ চাল ভেজে গুঁড়ো করে কালিতে মেশাতেন এবং হরিতকী ঘসে পোড়া খন্তির ছ্যাঁকা দিতেন । লেখক দোয়াতের কালি আর বাঁশের কঞ্চি অনেকদিন ব্যবহার করতেন । কৈশোরে এইভাবে লেখাপড়া করার প্রসঙ্গে লেখক উপরিউক্ত মন্তব্য করেছেন ।
লেখক শ্রীপান্থ কঞ্চির কলম ছেড়ে ছিলেন শহরে এসে হাইস্কুলে ভর্তি হবার পর । প্রথমে কালির বড়ি দিয়ে লিখতেন । পরে কাজল কালি, সুলেখা কালি বাজারে কিনতে পাওয়া গেলে সেই দিয়ে লেখাপড়ার কাজ করতেন । খাতার লেখা ভালোভাবে শুকিয়ে নেয়ার জন্য ব্লটিং পেপার বা বালি ব্যবহার করতেন । লেখাপড়ার জন্য বিশেষ করে লেখালেখির জন্য, সঠিক জায়গায় লেখা উপস্থাপিত করার জন্য বিশাল আয়োজন করতে হত । এই সব কারণে লেখক উক্ত মন্তব্য করেছেন ।
৭। কমবেশি ১২৫ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৭.১ “তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত।” কে কার কাছে লজ্জিত? তাঁর লজ্জিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: উদ্ধৃত উক্তিটি নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের লেখা ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকের প্রধান চরিত্র বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার । সিরাজদ্দৌলা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা ও সমস্ত ফরাসি বণিকদের কাছে লজ্জিত বলে নিজে স্বীকার করেছেন ।
সুদূর ফ্রান্স থেকে বহুকাল পূর্বে ফরাসিরা বাংলায় এসে বাণিজ্য শুরু করে । বাণিজ্যিক আদান প্রদানের ক্ষেত্রে নবাব সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে ফরাসিদের কোনো রকম বিরোধ বা বিবাদ ছিল না । নবাবের সঙ্গে তাদের ব্যবহার ও ছিল অত্যন্ত সুন্দর । কিন্তু ফরাসিদের অনেক পরে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে বাণিজ্য করতে আসে । ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ছিল ফরাসিদের থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মীর মানুষ । এদেশে বাণিজ্য করতে আসলেও তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরো বাংলা দখল করে এ দেশে কায়েমি শাসন প্রতিষ্ঠা করা । তাই বাংলা থেকে ফরাসিদের তাড়িয়ে দেবার জন্য ইংরেজরা নবাবের বিনা অনুমতিতে ফরাসিদের বাণিজ্য ঘাঁটি চন্দননগর আক্রমণ করে অধিকার করে নিয়েছিল ।
নবাব সিরাজদ্দৌলার কাছে ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা আবেদন জানিয়েছিলেন যে, যাতে ইংরেজরা তাদের বাণিজ্য ক্ষেত্রে কোনো রকম বাঁধার সৃষ্টি না করে সে বিষয়ে নবাবের যেন নজরদারি থাকে । এ বিষয়ে নবাব সিরাজদ্দৌলাও ইংরেজদেরকে জানিয়ে দিয়েছিল যে, তারা যেন পরস্পর শান্ত হয়ে এখানে যে যার ব্যবসাবণিজ্য করে । কিন্তু নবাবের সেই আদেশ অমান্য করে ইংরেজরা চন্দননগর দখল করে নেয় । এক্ষেত্রে নবাব সিরাজদ্দৌলা ফরাসিদের কোন প্রকার সাহায্য করতে পারেন নি । কারণ কিছুদিন পূর্বে ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আর পূর্ণিয়ার শওকত জঙ্গের সঙ্গে যুদ্ধ করে তার অনেক সৈন্যক্ষয় ও অর্থব্যয় হয়ে গেছে । এতে নবাবের মনোবল ভেঙে যায় । এছাড়া নবাবের মন্ত্রীমন্ডলীও যুদ্ধ করতে রাজি ছিলেন না । এমতাবস্থায় নবাব সিরাজদ্দৌলা নিজের অক্ষমতার জন্য ফরাসিদের কাছে লজ্জিত হন।
৭.২ “জানি না, আজ কার রক্ত সে চায়।” বক্তা কে? বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ কী?
উত্তর: জনপ্রিয় নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌল্লা নাট্যাংশে প্রশ্নোধৃত উক্তিটি নবাব সিরাজের । এক চরম মানসিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত অবস্থায় লুৎফার-এর কাছে তিনি বেদনার্ত উক্তিটি করেছেন ।
বক্তার এমন মন্তব্যের কারণ সিরাজদ্দৌল্লা বুঝতে পেরেছিলেন বাংলাকে রক্ষা করতে তাঁর বহু রক্তক্ষয় হবে । ষড়যন্ত্রীদের স্বপক্ষে আনতে গিয়ে আবেগ দেখালেও তাঁর জানা ছিল পলাশির প্রান্তরে শুরু হবে বাংলার অস্তিত্ব রক্ষার চরম রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম । তাই তিনি বলেন–এই পনেরো মাসে আমার এমনি অভিজ্ঞতা হয়েছে , মানুষের এমন নির্মমতার পরিচয় আমি পেয়েছি যে , কোন মানুষকে শ্রদ্ধাও করতে পারি না , ভালোও বাসতে পারি না । ”
পলাশির প্রান্তরে যেখানে এককালে পলাশ ফুল রাঙিয়ে তুলত দিগন্ত , সেখানে আসন্ন পলাশির যুদ্ধ রক্তের দ্বারা লাল করে তুলবে । তাই প্রায় পনেরো মাসের নবাবিতে , যুদ্ধে আর ষড়যন্ত্রে ক্ষতবিক্ষত নবাব লুৎফাকে পলাশি সম্পর্কে ধারণা দিতে বক্তা এমন মন্তব্য করেছেন।
৮। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৮.১ দারিদ্র্য আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে কোনির যে লড়াই তা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
উত্তর: বিশিষ্ট সাহিত্যিক মতি নন্দীর লেখা ‘কোনি’ উপন্যাসটির প্রধান বা কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি । কোনি এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে । ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী কোনির দাদা । সেই দাদাও যক্ষায় মারা যাওয়ার পর কোনি ও তার পরিবার আরো দারিদ্রের অন্ধকারে ডুবে যায় । জীবন সংগ্রামের কঠোর বাস্তবতায় কোনি জানত না, সে সাঁতারে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে । ক্ষিদ্দা ওরফে সাঁতারের প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ গঙ্গার ঘাট থেকে কোনিকে আবিষ্কার করেন । ক্ষিতীশ কোনিকে সাঁতার শেখানোর জন্য জুপিটার ক্লাবে নিয়ে যান । কিন্তু ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে ক্লাবের সদস্য হরিচরণ, ধীরেন ঘোষ, বদু চ্যাটার্জিরা কোনিকে ভর্তি হতে দেয় নি । ক্ষিতীশ কোনিকে অ্যাপেলো ক্লাবে সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করে দেন ।
জুপিটার সুইমিং ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় কোনি অর্থাৎ কনকচাঁপা পালের জায়গা না হলেও অ্যাপেলো ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় কোনি বিশিষ্ট সাঁতারু অমিয়াকে হারিয়ে দেয় । মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে দল নির্বাচনের সময়েও কোনিকে বাদ দেওয়া হচ্ছিল । শেষে বালিগঞ্জ ক্লাবের ট্রেনার প্রণবেন্দুর উদ্যোগেই বাধ্য হয়ে হরিচরণের দল কোনিকে দলে নেয় । কিন্তু মাদ্রাজে গিয়ে কোনিকে তার সতীর্থদের কাছ থেকে চোর বদনাম নিতে হয় এবং বিনা দোষে চড় খেতে হয় । জাতীয় সাঁতার দলে কোনির নামই পাঠানো হয়নি । সেখানে ক্ষিতীশ চন্দ্রের যাওয়ার অনুমতি না থাকায় কোনিকে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয় । কিন্তু ঘটনাচক্রে বাধ্য হয়ে কর্মকর্তাদের কোনিকে জাতীয় দলে স্থান দিতে হয় । শেষ পর্যন্ত সব দারিদ্র্য, অবহেলাকে, অবজ্ঞাকে জয় করে সারা দেশের সেরা সাঁতারু রমা যোশিকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয় কোনি ওরফে কনকচাঁপা পাল । বাংলার হয়ে ট্রফি জিতে আনে কোনি ।
৮.২ “না। আমি নামব না।” বক্তার এমন অভিমানের কারণ কী? শেষ পর্যন্ত কী ঘটল?
উত্তর: উক্ত উক্তিটি মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কোনির। এখানে কোনির অভিমানের কারণ তার প্রতি হওয়া অবিচার এবং জীবনসংগ্রামে তার দৃঢ় মনোভাব।
অভিমানের কারণ:
কোনি একজন মেধাবী এবং প্রতিভাবান সাঁতারু। তার কোচ ক্ষিতীশ ঘোষ তাকে কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। কিন্তু প্রতিযোগিতার দিন কোনিকে অন্যায়ভাবে পিছনের সারিতে নামিয়ে দেওয়া হয়। এটি কোনির জন্য একটি বড়ো অপমান ছিল, কারণ সে তার যোগ্যতা প্রমাণ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছিল। এই অন্যায় সিদ্ধান্তে তার আত্মসম্মান ও আত্মবিশ্বাসে আঘাত লাগে, আর তাই অভিমানে সে বলে ওঠে, “না। আমি নামব না।”
শেষ পর্যন্ত যা ঘটল:
শেষ পর্যন্ত কোনি তার কোচ ক্ষিতীশবাবুর অনুপ্রেরণা ও কঠোর কথায় সাহস ফিরে পায়। তিনি তাকে বলেন, হার মানলে চলবে না; নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করাই আসল লক্ষ্য। কোনি সেই অভিমান ভুলে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং নিজের সেরা পারফরম্যান্স দিয়ে সকলকে চমকে দেয়। তার এই সাফল্য প্রমাণ করে যে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাসের জোরে সব বাধা অতিক্রম করা সম্ভব।
কোনির এই দৃঢ় মনোভাব ও সাফল্য কেবল তার জীবনসংগ্রামের প্রতীক নয়, বরং এটি সমাজের সমস্ত সংগ্রামী মানুষদের জন্য একটি অনুপ্রেরণাও বটে।
৮.৩ “এত কেচ্ছা সাধন করেন, বাঁচবেন কী করে?”উদ্দিষ্ট ব্যক্তির কেচ্ছা সাধনের বর্ণনা দাও।
উত্তর: উক্তিটি মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাসে বলা হয়েছে এবং এখানে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি হলেন ক্ষিতীশ ঘোষ। ক্ষিতীশবাবু একজন সাঁতার প্রশিক্ষক, যিনি সমাজের অবহেলিত এবং গরিব ছেলে-মেয়েদের মধ্যে থেকে সাঁতারুর প্রতিভা খুঁজে বের করেন এবং তাদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তোলেন।
ক্ষিতীশবাবুর কেচ্ছা সাধনের বর্ণনা:
ক্ষিতীশবাবুর জীবনটাই এক ধরনের সংগ্রাম। তিনি সাঁতার প্রশিক্ষক হলেও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নন। তবুও তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন যে পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে তারা একদিন সাফল্য অর্জন করবে। ক্ষিতীশবাবু কখনোই সুযোগের অভাব বা অর্থের টানাটানিকে অজুহাত হিসেবে দেখেন না। তিনি সবসময়ই নিজের ছাত্রদের সাফল্যের জন্য নিবেদিত প্রাণ।
উপন্যাসে ক্ষিতীশবাবুর এই সংগ্রামকে “কেচ্ছা সাধন” বলে বর্ণনা করা হয়েছে। কারণ সমাজের অনেকেই তার এই কাজকে তুচ্ছ করে দেখে, তারা বোঝে না যে তার এই “কেচ্ছা”ই একদিন বড়ো সাফল্য বয়ে আনবে। তাঁর ছাত্র কোনির প্রতি তার যে এক-নিষ্ঠা, তা তাকে একাধিকবার সমস্যায় ফেলে। অর্থের অভাব, ক্লাবের অবহেলা কিংবা সমাজের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সত্ত্বেও ক্ষিতীশবাবু থেমে যান না।
শেষ পর্যন্ত, ক্ষিতীশবাবুর এই “কেচ্ছা” সফল হয় যখন কোনি নিজের প্রতিভার মাধ্যমে প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে সবার সামনে নিজেকে প্রমাণ করে। তার এই অধ্যবসায় এবং সাধনা সমস্ত সংগ্রামী মানুষদের জন্য এক অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে।
৯। চলিত গদ্যে বঙ্গানুবাদ করো:
We live in India and work for India. But we should not forget that we belong to the larger family of the world. The people living in other countries are after all our cousins. It would be such an excellent thing if all the people in the world were happy and contend.
উত্তর: আমরা ভারতে বাস করি এবং ভারতের জন্য কাজ করি। কিন্তু আমরা ভুলে যেতে পারি না যে আমরা বিশ্ব পরিবারের অংশ। অন্যান্য দেশে বসবাসকারী মানুষ শেষ পর্যন্ত আমাদের আত্মীয়। যদি সারা বিশ্বের সব মানুষ সুখী এবং সন্তুষ্ট থাকত, তা কতই না চমৎকার হতো।
১০। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
১০.১ মোবাইল ফোন ব্যবহারের ভালো মন্দ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
উত্তর:
মোবাইল ফোন ব্যবহারের ভালো মন্দ নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ
রাহুল: কিরে রিকা, তুই তো সবসময় মোবাইলে ব্যস্ত থাকিস! এত বেশি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা কি ভালো?
রিকা: আরে, রাহুল! মোবাইল ফোন তো আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। পড়াশোনা, খবর জানা, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ – সব তো মোবাইলেই করি।
রাহুল: সেটা ঠিক, কিন্তু অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার করলে ক্ষতিও তো হয়। চোখের সমস্যা, ঘুমের ব্যাঘাত, এমনকি মানসিক চাপও বাড়ে।
রিকা: হ্যাঁ, তুই ঠিক বলছিস। তবে মোবাইলের মাধ্যমে অনলাইনে পড়াশোনা বা কাজের সুযোগ পাওয়াও তো অনেক উপকারী।
রাহুল: একদম ঠিক, কিন্তু ভারসাম্য রাখতে হবে। প্রয়োজনের সময় ব্যবহার করবি, আর বাকি সময়ে বই পড়া বা অন্য কাজ করবি।
রিকা: সত্যি বলেছিস। সময় মেনে মোবাইল ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আমি চেষ্টা করব অভ্যাসটা পাল্টাতে।
রাহুল: সেটাই সবার জন্য ভালো।
১০.২ ‘জলা বুজিয়ে সবুজ ধ্বংস করে আবাসন নয়।’ এই বিষয় অবলম্বনে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।
উত্তর:
নিজস্ব সংবাদদাতা: কলকাতা, ১৬ ডিসেম্বর: আজকের দিনে নগরায়নের চাপের কারণে জলা ও সবুজ অঞ্চল ধ্বংসের প্রবণতা বেড়ে চলেছে। এই প্রক্রিয়ায় জলাভূমি ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে, যা পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। জলাভূমি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ জল পুনর্ভরণ এবং বন্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে।
কিন্তু বর্তমান সময়ে আবাসন নির্মাণের জন্য জলা বুজিয়ে সবুজ অঞ্চল কেটে ফেলা হচ্ছে। এর ফলে স্থানীয় জীববৈচিত্র্যের অবনতি, পরিবেশ দূষণ এবং জল সংকটের সমস্যা বাড়ছে। উপরন্তু, বন্যার ঝুঁকিও বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের উচিত কড়া পদক্ষেপ নেওয়া। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন সম্ভব। আমরা যদি এখনই এই সমস্যার দিকে নজর না দিই, তবে আগামী প্রজন্মকে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশে বসবাস করতে হবে।
পরিবেশ বাঁচাতে আমাদের সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
১১। কমবেশি ৪০০ শব্দে যে-কোনো একটি বিষয় অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা করো।
১১.১ মানব কল্যাণে বিজ্ঞান
উত্তর:
বিজ্ঞান মানবজীবনের অন্যতম শক্তিশালী হাতিয়ার। এর অগ্রগতির ফলে মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটেছে। বিজ্ঞান শুধু আমাদের জীবনকে সহজ এবং আরামদায়ক করে তোলেনি, বরং মানবকল্যাণের অগ্রগতিতে বিশাল অবদান রেখেছে।
প্রথমত, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান আমাদের বহু জটিল রোগের সমাধান এনে দিয়েছে। পেনিসিলিন, ইনসুলিন, ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি ইত্যাদি আবিষ্কার রোগীদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে। আজকের দিনে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে, যা মানুষকে সঠিক চিকিৎসা নিতে সাহায্য করছে।
দ্বিতীয়ত, কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অগ্রগতি কৃষি উৎপাদনকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। উন্নত মানের বীজ, সার, কীটনাশক এবং সেচব্যবস্থার ব্যবহার কৃষকদের জীবন সহজ করেছে। ফলস্বরূপ, বিশ্বের খাদ্য সঙ্কট অনেকটাই কমেছে।
তৃতীয়ত, যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞানের অবদান অভাবনীয়। টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তি মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে। এখন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মুহূর্তের মধ্যে যোগাযোগ সম্ভব।
শিক্ষাক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান অগ্রগণ্য। কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। ভার্চুয়াল ক্লাস, অনলাইন কোর্স এবং ডিজিটাল লাইব্রেরির মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে।
তবে, বিজ্ঞানের অপব্যবহার মানবজীবনে বিপদও ডেকে আনতে পারে। পরমাণু অস্ত্র, রাসায়নিক যুদ্ধ এবং পরিবেশ দূষণ এর কিছু নেতিবাচক দিক। তাই বিজ্ঞানের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বিজ্ঞান মানবকল্যাণে অভাবনীয় ভূমিকা পালন করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। তবে, এটি আমাদের দায়িত্ব যে আমরা বিজ্ঞানের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করি। বিজ্ঞান তখনই প্রকৃত অর্থে মানবকল্যাণে ব্যবহৃত হবে, যখন এটি পরিবেশ এবং সমাজের ক্ষতি না করে মানুষের উন্নয়নে কাজ করবে।
বিজ্ঞান মানুষের জীবনকে উন্নত করেছে এবং আগামী দিনেও এর সম্ভাবনা অপরিসীম। এটি আমাদের উপর নির্ভর করে যে আমরা বিজ্ঞানের এই অমূল্য উপহারকে কীভাবে ব্যবহার করি—মানবতার কল্যাণে, নাকি ধ্বংসের পথে।
১১.২ বই মানুষের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী
উত্তর:
বই মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি শুধু বিনোদনের উৎস নয়, বরং জ্ঞানার্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। বই এমন এক সঙ্গী, যা কখনো পরিত্যাগ করে না, কখনো প্রতারণা করে না। আনন্দ, দুঃখ, একাকিত্ব কিংবা যেকোনো পরিস্থিতিতে বই মানুষের সেরা সঙ্গী হিসেবে কাজ করে।
প্রথমত, বই মানুষের মনের দিগন্ত প্রসারিত করে। একটি ভালো বই আমাদের কল্পনার জগতে নিয়ে যেতে পারে। ইতিহাস, বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, কিংবা যেকোনো বিষয়ে বই পড়ে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে পারি। একটি বই আমাদের জীবনের নানা দিক নিয়ে ভাবতে শেখায় এবং আমাদের মানসিক বিকাশ ঘটায়।
দ্বিতীয়ত, বই শিক্ষার প্রধান মাধ্যম। প্রাচীন কাল থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলো বিতরণে বইয়ের ভূমিকা অমূল্য। পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে সাহিত্যগ্রন্থ, গবেষণা নিবন্ধ—সবই আমাদের শিক্ষার ভিত্তি নির্মাণ করে।
তৃতীয়ত, বই মানুষের মানসিক প্রশান্তির এক উত্তম উৎস। যখন মন ক্লান্ত বা বিষণ্ণ, তখন একটি ভালো বই পড়ে আমরা মানসিক শান্তি পাই। উপন্যাস, কবিতা, গল্প, বা ভ্রমণকাহিনি পড়ে আমরা বাস্তব জীবনের ক্লান্তি ভুলে যেতে পারি।
চতুর্থত, বই মানবিক মূল্যবোধ গঠনে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরনের বই পড়ে আমরা জীবনের নানা দিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করি। ভালো বই আমাদের মনের গভীরে নৈতিকতা, সহমর্মিতা, এবং মানবিকতা জাগ্রত করে।
বই পড়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি আমাদের একাকিত্ব দূর করে। জীবনে এমন অনেক মুহূর্ত আসে, যখন আমরা একাকী অনুভব করি। সেই মুহূর্তে একটি ভালো বই আমাদের সত্যিকারের সঙ্গীর মতো পাশে থাকে।
তবে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে বই পড়ার অভ্যাস কিছুটা কমে যাচ্ছে। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, এবং সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে, বইয়ের মতো স্থায়ী ও গভীর প্রভাব অন্য কিছু দিতে পারে না।
বই মানুষের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী। এটি আমাদের জ্ঞানের আলো দেখায়, মানসিক শান্তি দেয় এবং আমাদের জীবনের দিশা নির্ধারণে সাহায্য করে। বইয়ের সান্নিধ্য লাভ করে একজন মানুষ তার জীবনে সাফল্য ও শান্তি লাভ করতে পারে। সুতরাং, আমাদের সকলের উচিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং এটি আমাদের জীবনের অংশ করে তোলা।
১১.৩ দেশভ্রমণ শিক্ষার অঙ্গ
উত্তর:
দেশভ্রমণ শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কেবল পাঠ্যপুস্তক থেকে জ্ঞান অর্জনই শিক্ষা নয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও পর্যবেক্ষণও শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ। দেশভ্রমণ মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার পরিধি বিস্তৃত করে। বিভিন্ন স্থানের সংস্কৃতি, ইতিহাস, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দেশভ্রমণের গুরুত্ব অপরিসীম।
প্রথমত, দেশভ্রমণ ইতিহাস ও সংস্কৃতির জ্ঞান বাড়ায়। একটি দেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করলে সেখানকার ঐতিহ্য, সভ্যতা, এবং অতীতের গৌরবময় অধ্যায় সম্পর্কে জানা যায়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের সোনারগাঁ, মহাস্থানগড়, এবং ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রভৃতি স্থান পরিদর্শন করলে দেশীয় ইতিহাস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন সম্ভব।
দ্বিতীয়ত, দেশভ্রমণ মানুষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপলব্ধির সুযোগ করে দেয়। পাহাড়, নদী, সমুদ্র, বনভূমি এবং সবুজ প্রান্তর দেখে প্রকৃতির বিশালতা ও বৈচিত্র্যের প্রতি মানুষের ভালোবাসা বাড়ে। এটি কেবল মানসিক শান্তি দেয় না, বরং পরিবেশ রক্ষার প্রতি সচেতনতাও সৃষ্টি করে।
তৃতীয়ত, দেশভ্রমণ বিভিন্ন মানুষের জীবনযাত্রা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দেয়। ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, ভাষা এবং উৎসব সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা লাভ করা শিক্ষার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মানসিকতা গড়ে তোলে।
চতুর্থত, দেশভ্রমণ শিক্ষার্থীদের পাঠ্য বিষয়বস্তুকে সহজে বুঝতে সাহায্য করে। ভূগোল, ইতিহাস, জীববিজ্ঞান বা সংস্কৃতির মতো বিষয়গুলো ভ্রমণের মাধ্যমে বাস্তবে দেখা সম্ভব হয়, যা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।
তবে, দেশভ্রমণের সঠিক পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা প্রয়োজন। অযথা সময় নষ্ট না করে ভ্রমণের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিত শিক্ষা ভ্রমণের আয়োজন করা।
দেশভ্রমণ মানুষের মানসিক বিকাশ, জ্ঞানার্জন এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি শুধু আনন্দদায়ক নয়, বরং শিক্ষণীয়ও। সুতরাং, শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে দেশভ্রমণের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। প্রত্যেকেরই উচিত জীবনের কোনো এক সময়ে দেশভ্রমণের মাধ্যমে শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা। দেশভ্রমণের মাধ্যমে আমরা যেমন আমাদের জ্ঞান বাড়াতে পারি, তেমনি আমাদের দেশের প্রকৃতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসাও বৃদ্ধি পায়।
১১.৪ একটি কলমের আত্মকথা
উত্তর:
আমি একটি কলম। দেখতে ছোট হলেও আমার গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীর প্রতিটি জ্ঞানী-গুণী, লেখক-কবি, ছাত্র-শিক্ষক সবাই আমাকে ব্যবহার করেন। আমার জীবনের গল্পও কম রঙিন নয়। আজ আমি সেই গল্পই শোনাব।
আমার জন্ম একটি কলম তৈরির কারখানায়। বিভিন্ন অংশ যেমন, প্লাস্টিকের দেহ, নিব, এবং কালি দিয়ে আমাকে তৈরি করা হয়েছে। এরপর আমাকে সুন্দর একটি বাক্সে সাজিয়ে দোকানে পাঠানো হয়। দোকানে এসে আমি দেখলাম আরও অনেক রকমের কলম আমার সঙ্গী। তাদের মধ্যে কেউ রঙিন, কেউ দামি, আবার কেউ সাধারণ।
একদিন একটি ছোট্ট ছেলে আমাকে কিনে নিল। সে আমাকে খুব যত্নে ব্যবহার করত। তার হাত ধরে আমি প্রথমবার অক্ষর লিখলাম। আমি তার প্রতিটি পরীক্ষায় তার সহায়ক ছিলাম। তার খাতায় আমার লেখা দেখে সে খুশি হতো, আর আমিও গর্বিত অনুভব করতাম।
এরপর একদিন সে বড় হয়ে গেল। আমাকে তার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল। আমাকে রেখে দিল আলমারির এক কোণে। সেখানেই আমার জীবনের অন্ধকার অধ্যায় শুরু হলো। অনেকদিন অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকার পর একদিন একটি বাচ্চা মেয়ে আমাকে খুঁজে পায়। তার হাতে পড়ে আমি যেন আবার জীবিত হলাম। সে আমাকে নতুন করে ব্যবহার করতে শুরু করল।
আমি শুধু লেখার মাধ্যম নই, আমি জ্ঞানের বাহক। আমার সাহায্যে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয়েছে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। কবি-লেখকরা আমার সাহায্যে সৃষ্টি করেছেন কালজয়ী সাহিত্য। বৈজ্ঞানিকরা লিখেছেন তাদের গবেষণার ফলাফল, যা মানুষকে উন্নতির পথে নিয়ে গেছে।
তবে, আজকের দিনে আমি কিছুটা হতাশ। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে আমার গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, এবং কীবোর্ডের জগতে আমাকে অনেকেই ভুলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, যতই প্রযুক্তি আসুক, মানুষের জীবনে আমার প্রয়োজন কখনোই পুরোপুরি ফুরোবে না।
আমি একটি সাধারণ কলম। আমার জীবন ছোট হলেও আমি মানুষের জ্ঞানার্জন, সৃষ্টিশীলতা এবং ইতিহাসের অংশ হতে পেরে গর্বিত। আমার একমাত্র চাওয়া, মানুষ আমাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করুক এবং আমার দ্বারা সৃষ্ট প্রতিটি লেখার মাধ্যমে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে পড়ুক।
MadhyamikQuestionPapers.com এ আপনি আরও বিভিন্ন বছরের প্রশ্নপত্রের উত্তরও পেয়ে যাবেন। আপনার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ কেমন লাগলো, তা আমাদের কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আরও পড়ার জন্য, জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য MadhyamikQuestionPapers.com এর সাথেই থাকুন।