আপনি কি মাধ্যমিকের বাংলা প্রশ্নপত্রের উত্তর খুঁজছেন? এই আর্টিকেলে আপনি পাবেন ২০২২ সালের মাধ্যমিক বাংলা প্রশ্নপত্রের সঠিক উত্তর।
নিচে ২০২২ সালের প্রশ্নপত্রের প্রতিটি উত্তর সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য আগের বছরের প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
MadhyamikQuestionPapers.com ২০১৭ থেকে বর্তমান পর্যন্ত সব মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এবং উত্তর বিনামূল্যে আপলোড করেছে।
Download 2017 to 2024 All Subject’s Madhyamik Question Papers
View All Answers of Last Year Madhyamik Question Papers
যদি দ্রুত প্রশ্ন ও তার উত্তর খুঁজতে চান, তাহলে নিচের Table of Contents এর পাশে থাকা [!!!] এই চিহ্নটিতে ক্লিক করুন। এই পেজে থাকা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর Table of Contents এ ক্রমানুসারে দেওয়া আছে। যে প্রশ্নের ওপর ক্লিক করবেন, সরাসরি তার উত্তরে চলে যেতে পারবেন।
Table of Contents
Toggle১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো:
১.১ পত্রিকায় প্রকাশ পাওয়া তপনের গল্পটির নাম–
(ক) ইস্কুলের গল্প
(খ) একদিন
(গ) প্রথম দিন
(ঘ) রাজার কথা
উত্তর: (খ) একদিন
১.২ গিরীশ মহাপাত্রের বয়স–
(ক) চল্লিশ-বিয়াল্লিশ
(খ) ত্রিশ-বত্রিশের অধিক নয়
(গ) পঞ্চাশ পঞ্চান্ন
(ঘ) পঞ্চাশের কাছাকাছি
উত্তর: (খ) ত্রিশ-বত্রিশের অধিক নয়
১.৩ জগদীশবাবু বিরাগীকে প্রণামী দিতে চেয়েছিলেন–
(ক) এক হাজার টাকা
(খ) পাঁচশো টাকা
(গ) একশো এক টাকা
(ঘ) একশো টাকা
উত্তর: (গ) একশো এক টাকা
১.৪ “কালো ঘোমটার নীচে / অপরিচিত ছিল” কী অপরিচিত ছিল–
(ক) তোমার চেতনাতীত রূপ
(খ) তোমার রহস্যময় রূপ
(গ) তোমার আরণ্যক রূপ
(ঘ) তোমার মানবরূপ
উত্তর: (ঘ) তোমার মানবরূপ
১.৫ “আমাদের ডান পাশে” –
(ক) টাকা
(খ) বাঁধ
(গ) ধ্বস
(ঘ) পথ
উত্তর: (গ) ধ্বস
১.৬ “অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ” –
(ক) চরাচর
(খ) মহাকাল
(গ) গগনতল
(ঘ) গিরিশিখর
উত্তর: (ক) চরাচর
১.৭ লেখক শ্রীপাশ্বের ছেলেবেলায় দেখা দারোগাবাবুর কলম থাকতো–
(ক) কলারের ভাঁজে আটা
(খ) কোমরের বেল্টে আটকানো
(গ) কাঁধের ছোট্ট পকেটে সাজানো
(ঘ) পায়ের মোজায় গোঁজা
উত্তর: (ঘ) পায়ের মোজায় গোঁজা
১.৮ উনিশ শতকে বত্রিশ হাজার অক্ষর লেখানো যেত–
(ক) পনেরো আনায়
(খ) বারো আনায়
(গ) যোলো আনায়
(ঘ) দশ আনায়
উত্তর: (খ) বারো আনায়
১.৯ কঞ্চাৰতী’ ও ‘ডমরুধর’-এর স্বনামধন্য লেখকের নাম-
(ক) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
(খ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
(গ) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
(ঘ) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
উত্তর: (গ) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়
১.১০ বিভক্তি শব্দের অর্থ কী?
(ক) বিভাজন
(খ) সংকোচন
(গ) প্রসারণ
(ঘ) সংযোজন
উত্তর: (ক) বিভাজন
১.১১ কলমে কায়স্থ চিনি নিম্নরেখ পদটি–
(ক) অপাদান কারক
(খ) কর্তৃকারক
(গ) করণ কারক
(ঘ) কর্মকারক
উত্তর: (গ) করণ কারক
১.১২ মেসি কী খেলাই না খেললো কী জাতীয় কর্ম?
(ক) উহ্য কর্ম
(খ) সমধাতুজ কর্ম
(গ) কর্মের বীদা
(ঘ) উপবাকীীয় কর্ম
উত্তর: (খ) সমধাতুজ কর্ম
১.১৩ আর কাউকে পায়ের ধুলো নিতে দেননি সন্ন্যাসী নিম্নরেখ পদটি–
(ক) ক্রিয়াবাচক পদ
(খ) সম্বোধন পদ
(গ) কর্মকারক
(ঘ) সম্বন্ধপদ
উত্তর: (ঘ) সম্বন্ধপদ
১.১৪ সমাসের মূল অর্থ
(ক) বর্ণের সাথে বর্ণের মিলন
(খ) নামপদের সাথে ক্রিয়াপদের মিলন
(গ) একাধিক পদের একটি পদে পরিণতি-লাভ
(ঘ) ক্রিয়াপদের সাথে ক্রিয়াপদের মিলন
উত্তর: (গ) একাধিক পদের একটি পদে পরিণতি-লাভ
১.১৫ বুড়োমানুষের কথাটা শুনো নিম্নলিখিত পদটি যে সমাসের উদাহরণ সেটি হল–
(ক) বহুব্রীহি সমাস
(খ) কর্মধারয় সমাস
(গ) তৎপুরুষ সমাস
(ঘ) অব্যয়ীভাব সমাস
উত্তর: (খ) কর্মধারয় সমাস
১.১৬ ‘দশানন’-এর সমাস হল–
(ক) দ্বিগু
(খ) বহুব্রীহি
(গ) অব্যয়ীভাব
(ঘ) কর্মধারয়
উত্তর: (খ) বহুব্রীহি
১.১৭ পূর্বপদের বিভক্তি লুপ্ত হয়ে পরপদের অর্থ প্রাধান্য পায় যে সমাসে সেটি হল–
(ক) বহুব্রীহি সমাস
(খ) অব্যয়ীভাব সমাস
(গ) তৎপুরুষ সমাস
(ঘ) নিত্য সমাস।
উত্তর: (গ) তৎপুরুষ সমাস
২। কমবেশি ২০টি শব্দে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
২.১ নীচের যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.১.১ তপন মামার বাড়িতে কেন এসেছিল?
উত্তর: ছোট মাসির বিয়ে উপলক্ষে তপন মামার বাড়িতে এসেছিল।
২.১.২ “শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন,” সংকল্পটি কী?
উত্তর: তপন সংকল্প করেছিল যে, যদি কখনো সে লেখা ছাপতে দেয়, তো সে নিজে গিয়ে দেবে- তাতে তার লেখা ছাপা হোক বা না হোক।
২.১.৩ “আর যাই হোক, যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচরের কথাটা একবার ভেবে দেখুন।” কার খোঁজ করা হচ্ছিল?
উত্তর: পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিকের খোঁজ করা হচ্ছিল।
২.১.৪ “মাস্টারমশাই একটুও রাগ করেননি। বরং একটু তারিফই করলেন…” ‘তারিফ’ করার কারণ কী?
উত্তর: মাস্টারমশাই নকল-পুলিশ হরিদার সাজসজ্জার তারিফ করেছিলেন।
২.১.৫ “কিন্তু ওই ধরনের কাজ হরিদার জীবনের পছন্দই নয়।” কী ধরনের কাজ হরিদার অপছন্দ?
উত্তর: কোনো অফিসের কাজ অথবা কোন দোকানের বিক্রিওয়ালার কাজ হরিদার অপছন্দ।
২.২ নীচের যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.২.১ “সেই হোক তোমার সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।।”- ‘সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’-টি কী?
উত্তর: সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী’-টি হল “ক্ষমা করো”।
২.২.২ “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতাটির রচয়িতা কে?
উত্তর: “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতাটির রচয়িতা কবি শঙ্খ ঘোষ।
২.২.৩ “তারপর যুদ্ধ এল” যুদ্ধ কেমনভাবে এল?
উত্তর: যুদ্ধ এল রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো।
২.২.৪ “এবার মহানিশার শেষে” কে আসবে?
উত্তর: মহানিশার শেষে উষা আসবে।
২.২.৫ “এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।” বস্তা কোন্ কলঙ্কের কথা বলেছেন?
উত্তর: বক্তা অর্থাৎ ইন্দ্রজিতের মতে, তার মতো যোগ্য পুত্র থাকা সত্বেও যদি তার পিতা অর্থাৎ “রাবণ” যুদ্ধক্ষেত্রে যান, সেই ঘটনায় হবে কলঙ্কময়।
২.৩ নীচের যে-কোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.৩.১ “এই নেশা পেয়েছি আমি শরৎদার কাছ থেকে।” কোন নেশার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ফাউন্টেন পেন সংগ্রহের নেশার কথা বলা হয়েছে।
২.৩.২ “অনেক ধরে ধরে টাইপ-রাইটারে লিখে গেছেন মাত্র একজন।” কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: উদ্ধৃত অংশে স্বনামধন্য সাহিত্যিক অন্নদাশঙ্কর রায়ের কথা বলা হয়েছে।
২.৩.৩ “কলম তাদের কাছে আজ অস্পৃশ্য।” কাদের কাছে অস্পৃশ্য?
উত্তর: পকেটমারদের কাছে কলম আজ অস্পৃশ্য।
২.৩.৪ “সোনার দোয়াত কলম যে সত্যই হতো;” বস্তা সোনার দোয়াত কলমের কথা কীভাবে জেনেছিলেন?
উত্তর: সুভো ঠাকুরের বিখ্যাত দোয়াত সংগ্রহ দেখতে গিয়ে বক্তা অর্থাৎ প্রাবন্ধিক শ্রীপান্থ সোনার দোয়াত কলমের কথা জেনেছিলেন।
২.৪ নীচের যে-কোনো আটটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.৪.১ সমাস কাকে বলে?
উত্তর: দুই বা তার বেশি পরস্পর সম্বন্ধযুক্ত পদের মিলনকে বলা হয় সমাস।
২.৪.২ রত্নাকর শব্দটির ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো।
উত্তর: রত্নাকর- রত্নের আকর (সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস)।
২.৪.৩ ক্ষুদ্র গ্রহ ব্যাসবাক্যটিকে সমাসবদ্ধ করে সমাসের নাম লেখো।
উত্তর: ক্ষুদ্র গ্রহ= গ্রহাণু (নিত্য সমাস)।
২.৪.৪ একটি নিত্য সমাসের উদাহরণ দাও।
উত্তর: গ্রামান্তর- অন্য গ্রাম (নিত্য সমাস)।
২.৪.৫ উপপদ তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
উত্তর: যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয়, সে পদকে উপপদ বলা হয়। কৃদন্ত পদের সাথে উপপদের যে সমাস হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে
২.৪.৬ প্রযোজ্য কর্তার একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: মা শিশুকে গাছ দেখাচ্ছেন- এখানে ‘শিশু’ হলো প্রযোজ্য কর্তা।
২.৪.৭ শূন্য বিভক্তি কাকে বলে?
উত্তর: যে বিভক্তি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে কিন্তু নিজে অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকে এবং মূল শব্দটির কোন পরিবর্তন ঘটায় না তাকে শূন্য বিভক্তি বলে।
২.৪.৮ সম্বন্ধপদের বিভক্তি কী কী?
উত্তর: ক্রিয়া পদের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে যে নামপদ বাক্যস্থিত অন্য পদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হয়, তাকে সম্বন্ধ পদ বলে। সম্বন্ধ পদে ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে থাকে। যেমন: আমার দাদা স্কুল যাবে। এখানে ‘আমি’ এর সাথে ‘র’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে ‘আমার’ (আমি + র = আমার) হয়েছে, যা সম্বন্ধ পদের নিজস্ব বিভক্তি হিসেবে বিবেচিত।
২.৪.৯ একটি গৌণ কর্মের উদাহরণ দাও।
উত্তর: গৌণ কর্ম একটি বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যা উত্তর পাওয়া যায়, তা হল গৌণ কর্ম।
উদাহরণ — ‘বাবা আমাকে একটি বই কিনে দিয়েছেন। ‘ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর পাওয়া যায় ‘আমাকে।
২.৪.১০ নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো চিঠি পকেটে ছিল।
উত্তর: পকেটে- অধিকরণ কারক, ‘এ’ বিভক্তি।
৩। প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কমবেশি ৬০ শব্দে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
৩.১ নীচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৩.১.১ “পত্রিকাটি সকলের হাতে হাতে ঘোরে,” কোন্ পত্রিকা, কেন সকলের হাতে হাতে ঘুরছিল?
উত্তর: এই অংশে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
তপনের জীবনের প্রথম গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়, যা বাড়ির সবাইকে অত্যন্ত আনন্দিত করে তোলে। তপনের লেখার প্রথম প্রকাশ হিসেবে এটি এক বিশেষ মুহূর্ত ছিল, এবং এই ঘটনাটি পুরো পরিবারে এক ধরনের উত্তেজনা এবং গর্বের সৃষ্টি করে। পরিবারের সদস্যরা সবাই একে অপরকে বলার চেষ্টা করছিলেন, “তপনের লেখা পড়ো, পত্রিকাটি দেখো!” তপনের লেখা পাঠে তারা বিশেষ আগ্রহী হয়ে ওঠে, এবং সেই কারণে পত্রিকাটি বাড়ির প্রত্যেক সদস্যের হাতে হাতে ঘুরছিল। এই ঘটনাটি বাড়ির মধ্যে একটি নতুন উৎসাহ এবং আনন্দের পরিবেশ তৈরি করেছিল, যা তপনের জন্য খুবই গর্বের বিষয় ছিল।
৩.১.২ “তার লাঞ্ছনা এই কালো চামড়ার নীচে কম জ্বলে না…” বক্তা কে? তার কোন্ লাঞ্ছনার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্ব একথা বলেছিল।
কয়েকজন ফিরিঙ্গি যুবক অপূর্বকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্বর কোনো দোষ ছিল না। তাই সে স্টেশন মাস্টারের কাছে গিয়েছিল প্রতিবাদ জানাতে। কিন্তু ভারতীয় হওয়ার অপরাধে সাহেব স্টেশন মাস্টার অপূর্বকে তার নিজের দেশের স্টেশন থেকে কুকুরের মতো দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে এই লাঞ্ছনার কথা বলা হয়েছে।
৩.২ নীচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৩.২.১ “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।” ‘তারা’ কারা? কেন স্বপ্ন দেখতে পারল না?
উত্তর: পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় দেবতাদের সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে। কবি বলেছেন তারা (অর্থাৎ, দেবতারা) আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
শান্ত, হলুদ দেবতারা হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিল। মানুষে মানুষে বিবাদ বাঁধলেও দেবতারা সবসময় নির্বিরোধ প্রকৃতির হয়। তাই সারাক্ষণ তারা স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত। তারপর হঠাৎ একদিন শহরজুড়ে যুদ্ধের ঘন্টা বেজে উঠে। বহু মানুষের মৃত্যু হল সেই সর্বগ্রাসী যুদ্ধের আগুনে। ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ল এবং দেবতারাও ভূপতিত হল। এইজন্য তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
৩.২.২ “কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে,” বক্তা কে? তাঁর একথা বলার কারণ কী?
উত্তর: অভিষেক ‘ কবিতাংশে রামচন্দ্রের পুনর্বার বেঁচে ওঠা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে রাবণ এমন উপমা ব্যবহার করেছেন ।
ইন্দ্রজিতের হাতে দু – দুবার রামচন্দ্রের মৃত্যু নিশ্চিত হয়েও তিনি আবার বেঁচে ওঠেন । তাই প্রিয় পুত্রকে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি দিলেও বিধাতা যে তাঁর প্রতি বিরূপ তা তিনি বুঝতে পারেন । শিলা বা পাথরের জলে ভাসার মতোই মৃত মানুষের বেঁচে ওঠাও অবিশ্বাস্য ব্যাপার । বিস্ময় ও হতাশা ব্যক্ত করতে এমন উপমা ব্যবহৃত হয়েছে ।
৪। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৪.১ “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলোআনাই বজায় আছে” বাবুটি কে? তাঁর স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় দাও।
উত্তর: শরৎচন্দ্রের’ পথের দাবী’ উপন্যাস থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটির বাবুটির পরিচয়ে–
পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ অধীনস্থ এক বাঙালি পুলিশকর্তা নিমাইবাবু। তিনি পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট হিসেবে চিহ্নিত ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেছেন।
বছর ত্রিশ বত্রিশের ছদ্মবেশী গিরীশ মহাপাত্রের ফরসা রং রোদে পুড়ে তামাটে হয়ে গেছে। রোগা চেহারার মানুষটি যখন কাশতে কাশতে থানায় প্রবেশ করল তখন তার দেহের সামগ্রিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল সেটি দ্রুত বেগে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে। কিন্তু তার রোগা মুখের দুটি চোখের দৃষ্টি ভারি অদ্ভুত। জলাশয়ের মতো গভীর সে চোখের সঙ্গে খেলা চলবে না। দূরে থাকতে হবে। সেই ক্ষীণ চোখের অতলে কোথাও যেন প্রাণশক্তি লুকিয়ে আছে, আর সেই জন্যই সে বেঁচে আছে। গিরীশ মহাপাত্র যে অত্যন্ত শৌখিন মানুষ তা তার বেশভূষাতেই প্রমাণিত। চুলে বাহারি ছাঁট। তাতে সুগন্ধি নেবু তেল। গায়ে জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি। পকেটে বাঘ আঁকা রুমাল। পরনে বিলেতি মখমল পাড়ের কালো শাড়ি। হাঁটু পর্যন্ত মোজা লাল রিবন দিয়ে বাঁধা এবং পায়ে নাল লাগানো বার্নিশ করা পাম্প। হাতে হরিণের শিং দিয়ে বাঁধানো বেতের শৌখিন ছড়ি। এসব হলো গিরীশ মহাপাত্রের শখের পরিচয়।
৪.২ “অথচ আপনি একেবারে খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো সব তুচ্ছ করে সরে পড়লেন?” কার কথা বলা হয়েছে? তিনি কীভাবে ‘খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো’ ব্যবহার করেছিলেন সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: এটি হরিদার কথা বলা হয়েছে। তিনি গল্পের প্রধান চরিত্র এবং পেশায় একজন বহুরূপী।
হরিদা “খাঁটি সন্ন্যাসীর মতো” ব্যবহার করেছিলেন কারণ তিনি সন্ন্যাসীর বেশে গ্রামে এসেছিলেন এবং তাঁর আচরণ, কথাবার্তা ও জীবনযাত্রা এতটাই নির্লিপ্ত এবং নিষ্কলঙ্ক ছিল, যা একজন প্রকৃত সন্ন্যাসীর মতো। তিনি পৃথিবীসংক্রান্ত যেকোনো ভোগ-বিলাস ও ধন-সম্পদের প্রতি অগ্রাহ্য ছিলেন এবং শুধুমাত্র অন্যদের কল্যাণে মনোযোগী ছিলেন। যেমন, তিনি যখন সন্ন্যাসী রূপে গ্রামে আসেন, তখন তিনি কোনো ধন বা মন্দিরের দান-ধন গ্রহণ করেননি।
তিনি ভেবেছিলেন যে, একজন প্রকৃত সন্ন্যাসী পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, সবার থেকে আলাদা, এবং তার কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। সন্ন্যাসী হওয়া মানে হলো সব তুচ্ছ এবং সাময়িক বিষয় থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা, এমনকি কোনো ব্যক্তিগত চাহিদাও পূর্ণ না করা। হরিদা এই সন্ন্যাসী চরিত্রে একেবারে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে মিশিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি কোনও স্বার্থের জন্য ধন বা লোকসেবার বিনিময়ে কিছু চাইতেন না। তাঁর মধ্যে কোনো ধরনের মায়া বা কামনা ছিল না, যা একজন খাঁটি সন্ন্যাসী হিসেবে চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
তাছাড়া, তিনি সন্ন্যাসীর বেশে এসে কোনো রকম দম্ভ বা অহঙ্কার প্রদর্শন করেননি, বরং নিজের সমস্ত অহংকার ত্যাগ করেছিলেন। এজন্য তাঁকে “খাঁটি সন্ন্যাসী” বলা হয়েছিল, কারণ তাঁর রূপে, আচরণে এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে সন্ন্যাসীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছিল।
৫। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৫.১ “এল মানুষ-ধরার দল”কোথায় এল? ‘মানুষ-ধরার দল’ এসে কী করেছিল?
উত্তর: “মানুষ-ধরার দল” আফ্রিকায় এল।
মানুষ-ধরার দল বলতে বোঝানো হয়েছে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শাসকদের, যারা আফ্রিকায় এসে তাদের শোষণের কাজ শুরু করেছিল। তারা আফ্রিকার শান্ত, সরল, এবং নিরীহ মানুষদের ধরে নিয়ে গিয়ে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করত। এই শোষক দল শুধুমাত্র আফ্রিকার সম্পদ লুট করেনি, বরং তাদের সমাজ, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্য ধ্বংস করে দিয়েছে।
এই মানুষ-ধরার দল আফ্রিকার মানুষদের ওপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালিয়েছিল। তাদের জীবনের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়ে অন্য দেশে বিক্রি করা হয়। আফ্রিকার মানুষরা নিজভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কষ্টকর দাসজীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর কবিতায় এই অন্যায় কাজের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি আফ্রিকার গৌরবময় অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন এবং বিশ্বাস করেন, একদিন আফ্রিকা এই দাসত্ব ও লাঞ্ছনার শৃঙ্খল ভেঙে মুক্তি পাবে। কবিতাটি আফ্রিকার প্রতি কবির গভীর সহানুভূতি এবং ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা।
৫.২ “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।”কবির এই কথা বলার কারণ সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর কবিতা “প্রলয়োল্লাস”-এ “তোরা সব জয়ধ্বনি কর” বলে একটি গুরুত্বপূর্ণ আহ্বান জানিয়েছেন। এই বাক্যের মাধ্যমে কবি সমাজের সকল মানুষকে প্রলয়ের মহিমা উপলব্ধি করতে বলেছেন।
কবি মনে করেন, সমাজে অন্যায়, অবিচার, শোষণ, এবং কুসংস্কারের যে শিকল মানুষকে বেঁধে রেখেছে, তা ভাঙার জন্য প্রলয় অপরিহার্য। প্রলয় মানে শুধু ধ্বংস নয়, এটি এক নতুন সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি করে। পুরনো এবং পচাগলা সমাজব্যবস্থাকে ভেঙে তছনছ করে দেওয়ার মাধ্যমে নতুন দিনের সূচনা হয়। তাই কবি প্রলয়ের ধ্বংসাত্মক দিকের মধ্যে আনন্দ খুঁজে পান।
“তোরা সব জয়ধ্বনি কর” এই আহ্বানের মাধ্যমে কবি সবাইকে উৎসাহিত করছেন নতুন দিনের আগমনে উল্লাস প্রকাশ করতে। প্রলয় যেমন ভয়ংকর, তেমনই তা নতুন আলোর প্রতীক। কবির দৃষ্টিতে, এই প্রলয় মানবজাতির মুক্তি ও পুনর্জাগরণের প্রতীক, যা এক নতুন পৃথিবী গড়ার পথ দেখাবে।
৬। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৬.১ “আশ্চর্য, সবই আজ অবলুপ্তির পথে।” ‘সবই’-র পরিচয় দাও। উল্লিখিত বিষয়টি কীভাবে আজ ‘অবলুপ্তির পথে’ আলোচনা করো।
উত্তর: এখানে ‘সবই’ বলতে লেখক সেই সমস্ত জিনিসের কথা উল্লেখ করেছেন, যা একসময় মানুষের জীবনে অপরিহার্য ছিল কিন্তু আজ তা হারিয়ে যেতে বসেছে। বিশেষত, লেখক কালি কলমের কথা বলেছেন, যা এক সময় লেখালেখির একমাত্র মাধ্যম ছিল। কালি কলমের নিবে কালি ভরে হাতের চাপে অক্ষরের সৌন্দর্য ফুটে উঠত। এটি শুধুমাত্র লেখার যন্ত্র ছিল না, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল শিল্পের স্পর্শ এবং একজন লেখকের মনের গভীর অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম।
কলমের কালি শেষ হলে নতুন করে কালি ভরা, নিব পরিষ্কার করা, এবং কাগজে সঠিকভাবে অক্ষর গেঁথে তোলা ছিল এক ধৈর্য ও যত্নের কাজ। একসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং ব্যক্তিগত কাজে কালি কলম ব্যবহার করা হতো। এটি ছিল ব্যক্তিত্ব ও রুচির পরিচায়ক। লেখক এর ঐতিহ্য ও গুরুত্ব বোঝাতে আমাদের অতীতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে বলেছেন।
কালের প্রবাহে প্রযুক্তির উন্নতির কারণে কালি কলমের ব্যবহার কমে গিয়েছে। বলপয়েন্ট পেন, জেল পেন, টাইপরাইটার, কম্পিউটার, এবং স্মার্টফোনের মতো আধুনিক প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় কালি কলম ধীরে ধীরে গুরুত্ব হারিয়েছে। দ্রুততার যুগে মানুষ সময় বাঁচাতে মেশিন নির্ভর হয়ে পড়েছে।
তাছাড়া, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অফিসেও কালি কলমের জায়গায় বলপেন বা ডিজিটাল মাধ্যম গ্রহণ করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে কালি কলমের ঐতিহ্য, এর সঙ্গে জড়িত অনুভূতি এবং শ্রমসাধ্য প্রক্রিয়াগুলি হারিয়ে যেতে বসেছে। লেখক এই পরিবর্তন নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং আমাদের ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব স্মরণ করিয়েছেন।
৬.২ “তাই কেটে কাগজের মতো সাইজ করে নিয়ে আমরা তাতে ‘হোম-টাস্ক’ করতাম।”-কিসে ‘হোম-টাস্ক’ করা হত? ‘হোম-টাস্ক’ করার সম্পূর্ণ বিবরণ দাও।
উত্তর: তালপাতায় ‘হোম-টাস্ক’ করা হত।
একসময় কাগজ সহজলভ্য ছিল না। সেই সময় পড়াশোনার জন্য তালপাতা ব্যবহার করা হতো। ছাত্ররা তালপাতা সংগ্রহ করে তা পরিস্কার করে কাগজের মতো আকারে কেটে নিত। এরপর সেই তালপাতা রোদে শুকিয়ে লেখা উপযোগী করে তোলা হতো। লেখার জন্য কালি ও বাঁশের কলম ব্যবহার করা হতো।
ছাত্রদের দেওয়া ‘হোম-টাস্ক’ তালপাতায় লেখা হতো। এটি ছিল এক ধরনের ধৈর্যশীল প্রক্রিয়া। প্রথমে কলমে কালি ভরে সতর্কতার সঙ্গে লেখা হতো। লেখার সময় অসাবধান হলে কালি ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা ছিল, তাই মনোযোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শিক্ষকের দেওয়া কাজ সুন্দর করে লেখার পর তা শুকানোর জন্য অপেক্ষা করতে হতো
লেখার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী যেমন তালপাতা, কালি, এবং কলম নিজেরাই তৈরি করত। এই পুরো প্রক্রিয়া ছিল শ্রমসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ। তবে এতে ছাত্রদের অধ্যবসায় ও ধৈর্যের শিক্ষা হতো। এটি কেবল পড়াশোনা নয়, বরং সৃজনশীলতার একটি উপায় ছিল।
৭। কমবেশি ১২৫ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৭.১ “বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা,” বক্তা কে? কোন্ দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: এখানে ‘বক্তা’ বলতে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে বোঝানো হয়েছে। তিনি ছিলেন বাংলার স্বাধীনতার প্রতীক, যাঁর শাসনকালে বাংলায় এক ভয়ংকর রাজনৈতিক সংকটের সূচনা হয়েছিল।
এই বাক্যে বাংলার ভাগ্যপরিক্রমায় পলাশীর যুদ্ধের দুর্যোগময় পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পলাশীর যুদ্ধ (১৭৫৭) ছিল বাংলার স্বাধীনতার জন্য এক কালো অধ্যায়। সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং সেনাপতিরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার ফলে সিরাজকে ইংরেজদের হাতে পরাজিত হতে হয়।
এই যুদ্ধে বাংলার সমৃদ্ধশালী মাটি রক্তাক্ত হয়েছিল। দেশি শাসকদের অন্তর্কলহ এবং ব্রিটিশদের দখলদার নীতির কারণে বাংলার স্বাধীনতা হরণ হয়। সিরাজের মৃত্যুর মাধ্যমে বাংলায় ইংরেজ শাসনের সূচনা হয়, যা বাংলার স্বাধীনতার পথকে চিরতরে রুদ্ধ করে দেয়।
লেখক এই লাইনগুলির মাধ্যমে বাংলার সেই দুঃখময় পরিস্থিতি এবং শোষণের যন্ত্রণাকে তুলে ধরেছেন। সিরাজের বীরত্ব এবং সেই সময়ের দেশপ্রেমিক শক্তির অসহায় পরাজয়কে এই বাক্যের মাধ্যমে স্মরণ করানো হয়েছে।
৭.২ “ওকে ওর প্রাসাদে পাঠিয়ে দিন জাঁহাপনা। ওর সঙ্গে থাকতে আমার ভয় হয়।”-বক্তা কে? তার এরকম ভয় হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: এখানে বক্তা হলেন ঘসেটি বেগম, যিনি সিরাজউদ্দৌলার পিসি। তিনি সিরাজের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন ছিলেন এবং তার ক্ষমতা লাভের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন।
ঘসেটি বেগমের এরকম কথা বলার পেছনে একাধিক কারণ ছিল। প্রথমত, সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন সাহসী ও শক্তিশালী শাসক। ঘসেটি বেগমের ধারণা ছিল, সিরাজ তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা জেনে গেলে তাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করবেন। দ্বিতীয়ত, ঘসেটি বেগম নিজেই সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। মীরজাফরসহ অন্যান্য বিশ্বাসঘাতকদের সঙ্গে মিলে তিনি সিরাজকে অপসারণের পরিকল্পনা করছিলেন।
ঘসেটি বেগম এই ষড়যন্ত্র সফল করতে চাননি যে সিরাজ তাঁর কাছে থাকেন বা তাঁকে সন্দেহ করেন। তাই তিনি সিরাজকে প্রাসাদে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেন। এই ভয়ের মূল কারণ ছিল তাঁর ষড়যন্ত্র ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা এবং সিরাজের প্রতি তার অন্তর্নিহিত বিরূপ মনোভাব।
৮। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৮.১ “ইচ্ছে থাকলেও ওকে সাঁতার শেখাবার সামর্থ্য আমার নেই।” – কে বলেছিল? তার পরিচয় সংক্ষেপে উল্লেখ করো।
উত্তর: এই উক্তিটি “কোনি” উপন্যাসের সৌমিত্র স্যার বলেছেন। তিনি কোনির সাঁতার প্রশিক্ষক, এবং এই কথাটি তিনি কোনির সাঁতার শেখানোর ইচ্ছে থাকলেও তার নিজস্ব অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে বলেন।
সৌমিত্র স্যার একজন অভিজ্ঞ সাঁতার প্রশিক্ষক, যিনি সাঁতারের জগতে নিজে দক্ষ এবং একজন শিক্ষক হিসেবে প্রখ্যাত। সৌমিত্র স্যারের প্রভাবশালী চরিত্রের মধ্যে তার শিক্ষার প্রতি নিষ্ঠা এবং মেধাবী ছাত্রদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রতি গভীর ভালোবাসা ছিল। তিনি কখনোই তার ছাত্রদের শিখতে বাধা দেননি।
কিন্তু সৌমিত্র স্যার এই উক্তিটি বলেন কারণ, তার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে, অর্থের অভাবে তার পক্ষে কোনিকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না। এই সময়, কোনো ভালো প্রশিক্ষণ এবং পরিশ্রমের প্রয়োজন ছিল, যা কোনি তার সম্ভাবনার পূর্ণতা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। সৌমিত্র স্যারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং তার ছাত্রের প্রতি ভালোবাসা তার এই কথার মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। তার ইচ্ছে ছিল কোনিকে সাঁতার শেখাতে, কারণ তিনি জানতেন, কোনির মধ্যে অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে, কিন্তু অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছিল না।
৮.২ “বিষ্টু ধরের বিরক্তির কারণ হাত পনেরো দূরের একটা লোক।” – বিষ্টু ধরের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে তার বিরক্তির কারণ উল্লেখ করো।
উত্তর: বিষ্টু ধর “কোনি” উপন্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি একজন সাধারণ, মধ্যবিত্ত ব্যক্তি, যিনি কোনির বাবা। তার জীবনে কোনো বড় স্বপ্ন নেই, কিন্তু তিনি তার মেয়ের জীবনে কিছু ভালো করতে চান। বিষ্টু ধর একজন সৎ, কিন্তু অনেকটা নিরীহ ও সহজ মানুষ। তিনি একজন দিনমজুর, যিনি কোনোভাবে তার সংসার চালাতে চেষ্টা করেন, কিন্তু আর্থিক সমস্যার কারণে সব সময় চাপে থাকেন।
এই উক্তি থেকে বোঝা যায় যে, বিষ্টু ধর যে মানুষটি বিরক্ত হচ্ছিল, সেই ব্যক্তি তাঁর কাছে প্রায় পনেরো হাত দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এটির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যে, বিষ্টু ধরের বিরক্তির কারণ ঐ মানুষটি ছিল, যিনি তার অবস্থাকে আরো খারাপ করে তুলেছিল বা তার জীবনযাত্রার সাথে কোনো সম্পর্কিত সমস্যা সৃষ্টি করছিল। বিশেষভাবে, এই বিরক্তি কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রতি নয়, বরং তার জীবনযাত্রার পরিস্থিতি এবং সোসাইটির প্রতি সাধারণ বিরক্তি প্রকাশ করে। তিনি আর্থিকভাবে দীন-দরিদ্র, তার মাথায় সাঁতারের মতো একটি মহৎ স্বপ্ন ছিল কিন্তু তা পূর্ণ করতে পারছিলেন না।
এই উক্তিটি বিষ্টু ধরের মানসিক অবস্থা এবং একান্ত সংকটকে ফুটিয়ে তোলে, যেখানে তার সত্তার মধ্যে সামাজিক এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জের প্রতি একধরনের বিরক্তি ও হতাশা দেখা যায়।
৮.৩ চিড়িয়াখানায় কোনিকে নিয়ে বেড়াতে গিয়ে কী ঘটেছিল? এই ঘটনা থেকে ক্ষিতীশের কী মনে হয়েছিল?
উত্তর: চিড়িয়াখানায় কোনিকে নিয়ে বেড়াতে গিয়ে একটি ঘটনা ঘটে যা ক্ষিতীশের মনে গভীর দাগ রেখে যায়। কোনি যখন চিড়িয়াখানায় সিংহের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন সে সিংহের সঙ্গে সান্নিধ্য অনুভব করছিল। সিংহের গর্জন শুনে কোনির ভেতর এক ধরণের সাহস ও আকর্ষণ জাগে, যা তার দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুনভাবে উন্মোচিত করে। তার মধ্যে এক অদ্ভুত দৃঢ়তা দেখা দেয়, মনে হয় সে সিংহের মতো শক্তিশালী হতে চায়। এই সময় ক্ষিতীশ লক্ষ্য করেন যে, কোনি তার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে চলেছে, আর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য তাকে অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে।
এই ঘটনার পর ক্ষিতীশের মনে একটি চিন্তা এসেছিল যে, কোনি যে সাঁতারের দিকে এত আগ্রহী, সে সত্যিই যদি নিজের স্বপ্নের জন্য কিছু একটা করতে পারে, তবে তাকে নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। ক্ষিতীশ বুঝতে পারেন যে, কোনির মধ্যে এক বিরাট শক্তি রয়েছে, কিন্তু তার শারীরিক সীমাবদ্ধতা এবং দারিদ্র্য তাকে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করছে। ক্ষিতীশের মনে হয়েছিল যে, কোনি যদি তার সেই শক্তি, সাহস, এবং দৃঢ়তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে, তবে সে অনেক বড় কিছু অর্জন করতে পারবে।
৯। চলিত গদ্যে বঙ্গানুবাদ করো:
Newspaper reading has become an essential part of our life. As we get up in the morning we wait eagerly for a daily paper. Twentieth Century was an age of newspaper. Through Newspapers we gather information about different countries of the worlds.
উত্তর: সংবাদপত্র পড়া আমাদের জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা আগ্রহের সাথে প্রতিদিনের কাগজটির অপেক্ষা করি। বিংশ শতাব্দী ছিল সংবাদপত্রের যুগ। সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করি।
১০। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
১০.১ অতিমারির পরিবেশে মাস্ক পরা ও হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
উত্তর:
অরুণ: কেমন আছিস, শুভ? আজকাল তো তোর সঙ্গে তেমন দেখা হয় না।
শুভ: ভালোই আছি। কিন্তু এখন তো পরিস্থিতি খুবই খারাপ। তুই কি মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হচ্ছিস?
অরুণ: হ্যাঁ রে। সত্যি বলতে, মাস্ক পরে থাকলে একটু অস্বস্তি হয়। তাছাড়া হাত ধোয়ার কথা তো ভুলেই যাই।
শুভ: এভাবে চিন্তা করাটা একদম ঠিক নয়। অতিমারির সময়ে মাস্ক পরা আর হাত ধোয়া আমাদের সবচেয়ে বড় সুরক্ষা। মাস্ক ভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
অরুণ: কিন্তু ভাইরাস তো চোখে দেখা যায় না। কীভাবে জানব সংক্রমণ হচ্ছে?
শুভ: ভাইরাস আমাদের নাক-মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে। তাই মুখ ঢেকে রাখাটা খুব জরুরি। আর আমরা যখন বাইরে কিছু ছুঁই, তখন হাতে ভাইরাস লেগে যেতে পারে। সেই হাত চোখ বা মুখে দিলে আমরা আক্রান্ত হতে পারি। তাই বারবার সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া জরুরি।
অরুণ: ঠিক বলেছিস। মাস্ক পরার কথা আমি জানতাম, কিন্তু হাত ধোয়ার এত গুরুত্ব আগে বুঝিনি।
শুভ: হ্যাঁ রে, আমাদের নিজেদের সুরক্ষার জন্যই এটা করতে হবে। আমরা সচেতন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
অরুণ: বুঝতে পেরেছি। এখন থেকে মাস্কও পরব আর হাত ধোয়াও নিয়মিত করব। ধন্যবাদ, শুভ। তুই আমার চোখ খুলে দিলি।
শুভ: এ তো আমাদের দায়িত্ব। নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত কর আর অন্যদেরও সচেতন কর।
১০.২ তোমাদের পাড়ায় একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।
উত্তর:
নিজস্ব সংবাদদাতা: কলকাতা, ৭ ডিসেম্বর: গত রবিবার আমাদের পাড়ায় স্থানীয় লেকটাউন যুব সংঘের উদ্যোগে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। শিবিরটি অনুষ্ঠিত হয় পাড়ার কমিউনিটি সেন্টারে। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর ২টো পর্যন্ত এই শিবির চলে। শিবিরের মূল উদ্দেশ্য ছিল রক্তদানের মাধ্যমে ব্লাড ব্যাংকের ঘাটতি পূরণ এবং মানুষকে রক্তদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা।
রক্তদান শিবিরে প্রায় ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক রক্তদান করেন। শিবিরে রক্ত সংগ্রহের জন্য স্থানীয় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সের একটি বিশেষ দল উপস্থিত ছিলেন। রক্তদাতাদের শারীরিক পরীক্ষা করে তারপর তাদের থেকে রক্ত নেওয়া হয়। রক্তদাতাদের মধ্যে যুবক-যুবতী ছাড়াও প্রবীণ ও মহিলাদের উপস্থিতি ছিল উল্লেখযোগ্য। রক্তদাতাদের সংবর্ধনা হিসেবে একটি সার্টিফিকেট, একটি গাছের চারা, এবং ফল-মিষ্টি দেওয়া হয়।
পাড়ার যুব সংঘের সভাপতি বলেন, “রক্তদান এক মহৎ কাজ। এক ব্যাগ রক্ত একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। আমরা চাই, এরকম শিবির আয়োজনের মাধ্যমে সবাই রক্তদানে এগিয়ে আসুক।” স্থানীয় মানুষেরও এ কাজে উৎসাহ দেখা যায়। এই রক্তদান শিবিরটি পাড়ার সকল মানুষের মধ্যে সহযোগিতা এবং মানবিকতার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। যুব সংঘ ভবিষ্যতেও এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।
১১। কমবেশি ৪০০ শব্দে যে-কোনো একটি বিষয় অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা করো।
১১.১ বর্তমান জীবনে বিজ্ঞান
উত্তর: বর্তমান জীবনে বিজ্ঞান একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে সহজ, সুন্দর এবং আরামদায়ক করে তুলেছে। প্রযুক্তির অগ্রগতি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে।
বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় উপহার হলো বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনাই করা যায় না। বাড়ি, অফিস, হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা—সবক্ষেত্রেই বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। এর ফলে আমাদের কাজের গতি বেড়েছে এবং জীবন হয়েছে অনেক সহজ।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, কম্পিউটার প্রভৃতির মাধ্যমে আমরা মুহূর্তের মধ্যে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা অজস্র তথ্যের উৎসে পৌঁছে যেতে পারি এবং জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে পারি।
স্বাস্থ্যসেবায় বিজ্ঞানের অগ্রগতি জীবনরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান, ওষুধ ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির উন্নতির ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে এবং অনেক জটিল রোগের সমাধান সম্ভব হয়েছে। রোবটিক সার্জারি থেকে টেলিমেডিসিন—সবকিছুই বিজ্ঞানের অবদান।
পরিবহন ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান অসামান্য। আধুনিক যানবাহন যেমন গাড়ি, ট্রেন, বিমান ইত্যাদির মাধ্যমে দূরত্ব অনেক কমে গেছে এবং সময় বাঁচছে। দ্রুতগতির এই যানবাহন আমাদের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনের অনেক সমস্যা সমাধানে সহায়ক হয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের প্রভাব দৃশ্যমান। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতির ব্যবহারে ফসলের উৎপাদন বেড়েছে। সেচব্যবস্থা, জেনেটিক্সের মাধ্যমে উন্নতমানের বীজ উৎপাদন, কীটনাশক এবং সার ব্যবহার—এসবই বিজ্ঞানের অবদান, যা খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষুধা নিবারণে সহায়ক হচ্ছে।
তবে বিজ্ঞানের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। পরিবেশ দূষণ, পারমাণবিক অস্ত্র, জৈব রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং প্রযুক্তির অপব্যবহার মানব জীবনে অশান্তি ও বিপদ ডেকে আনছে। তাই বিজ্ঞানের সঠিক ও মানবিক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
সার্বিকভাবে, বিজ্ঞানের অবদান ছাড়া আধুনিক জীবনযাত্রা অচল। কিন্তু বিজ্ঞানের সুফল পেতে হলে আমাদের অবশ্যই তার সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং তা মানবকল্যাণে নিবেদিত করতে হবে।
১১.২ পরিবেশ ও মানুষ
উত্তর: পরিবেশ এবং মানুষ একে অপরের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। মানুষের অস্তিত্ব এবং জীবনযাত্রার মান সরাসরি পরিবেশের উপর নির্ভরশীল। পরিবেশ বলতে আমরা মূলত আমাদের চারপাশের বায়ু, পানি, মাটি, গাছপালা, প্রাণীকুল এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদকে বুঝি। মানুষ তার জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে। কিন্তু পরিবেশের প্রতি মানুষের অসচেতন আচরণই এখন অনেক পরিবেশগত সমস্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে যে ভারসাম্য বিদ্যমান, তা মানুষের কারণে আজ হুমকির মুখে পড়েছে। নগরায়ন, শিল্পায়ন, বনাঞ্চল ধ্বংস, অতিরিক্ত কৃষি, রাসায়নিকের ব্যবহার এবং যানবাহন ও কলকারখানার ধোঁয়া—এসব কারণেই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে একদিকে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণ। এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলছে, সমুদ্রের জল বেড়ে যাচ্ছে এবং অনেক উপকূলীয় এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মানুষের অবিবেচনাপ্রসূত কার্যকলাপের ফলে বায়ু দূষণ, পানি দূষণ এবং মাটি দূষণ ঘটছে। কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য এবং যানবাহনের কালো ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকে দূষিত করছে। বিশুদ্ধ বাতাসের অভাবে নানা ধরনের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, অ্যাজমা, ফুসফুসের রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে, নদী-নালা ও জলাধারে শিল্প বর্জ্য এবং রাসায়নিক মিশে পানি দূষণ ঘটাচ্ছে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মাটি দূষণের কারণে কৃষিজমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, ফলে খাদ্য উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়ছে।
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের জন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। গাছ লাগানো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য ব্যবহার, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, শিল্পবর্জ্য পরিশোধন এবং যানবাহনের সংখ্যা কমিয়ে এনে দূষণ রোধের পদক্ষেপ নিতে হবে।
পরিবেশের উপর মানুষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলশ্রুতিতে আগামী প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমরা যদি পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করি এবং প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপন করি, তাহলে মানুষের জীবন ও পরিবেশের মধ্যে একটি সুস্থ, টেকসই সম্পর্ক বজায় থাকবে।
১১.৩ তোমার দেখা একটি মেলা
উত্তর: আমার দেখা একটি মেলা সম্পর্কে বলতে গেলে, প্রথমেই মনে আসে গত বছরের বইমেলার কথা। এটি একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান, যা আমাদের শহরের কেন্দ্রস্থলে বড় আকারে আয়োজিত হয়। এই মেলাটি শুধুমাত্র বইয়ের জন্য নয়, বরং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক জীবনেরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।
মেলার দিনটি ছিল এক শীতের সকাল। আমি এবং আমার কয়েকজন বন্ধু মিলে মেলায় গিয়েছিলাম। প্রবেশমুখে পৌঁছেই চোখে পড়ে বিশাল তোরণ, যেখানে বাংলা সাহিত্যের মহান লেখকদের ছবি শোভা পাচ্ছিল। বিভিন্ন স্টলগুলোতে বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা তাদের বই প্রদর্শন করছিল। স্টলের রং-বেরংয়ের সজ্জা, বইয়ের গন্ধ, আর বইপ্রেমীদের ভিড় মেলাটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছিল।
বইমেলায় প্রবেশ করার পর প্রথমেই আমরা জনপ্রিয় প্রকাশনীর স্টলগুলোর দিকে যাই। সেখানে নতুন প্রকাশিত বইগুলো দেখতে পারি। বাংলা উপন্যাস, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধসহ বিভিন্ন ধরনের বই সেখানে পাওয়া যাচ্ছিল। আমরা কয়েকটি বই কিনলাম, বিশেষ করে আমার প্রিয় লেখকের নতুন উপন্যাস। বই কেনার পর আমরা মেলার বিভিন্ন কোণে ঘুরতে শুরু করি।
মেলায় শুধুমাত্র বই নয়, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও চলছিল। একটি মঞ্চে তখন একজন লেখক তার নতুন বই সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, এবং বইপ্রেমীরা তা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলেন। মেলার আরেক কোণে শিশুদের জন্য ছিল বিশেষ স্টল, যেখানে রূপকথার বই, চিত্রিত বই এবং খেলনা ছিল। শিশুদের আনন্দে মেতে ওঠা সেই দৃশ্য দেখতেও ভালো লাগছিল।
মেলার খাদ্য বিভাগেও ভিড় কম ছিল না। পিঠাপুলির বিভিন্ন ধরনের খাবারের স্টল, চটপটি, ফুচকা, আর গরম গরম চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বইমেলা উপভোগ করা ছিল এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। মেলার শেষভাগে আমরা একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিই, যেখানে কিছু জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী গান পরিবেশন করছিলেন।
বইমেলার অভিজ্ঞতা আমার কাছে সবসময়ই বিশেষ। এটি শুধুমাত্র নতুন বই কেনার সুযোগ নয়, বরং এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনেরও একটি মাধ্যম। মেলায় আসা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে দেখা, নতুন নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং বই নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করা আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলে। এই মেলার অভিজ্ঞতা আমার স্মৃতিতে দীর্ঘদিন ধরে অম্লান থাকবে।
১১.৪ একটি নদীর আত্মকথা।
উত্তর: আমি একটি নদী। জন্মেছি অজানা পাহাড়ের কোলে। ছোট্ট একটি ঝর্ণা থেকে আমার যাত্রা শুরু। তখন আমি ছিলাম সরু, ক্ষীণ। পাহাড়ি পাথর আর মাটির বুক চিরে আমি একদিন নেমে এসেছি সমতলে। সময়ের স্রোতে আমার রূপ, গতি আর চরিত্র বদলেছে। আজ আমি বড় নদী, দূর দূরান্তে ছুটে চলা এক অনন্ত জীবনের প্রতীক।
আমার শৈশব ছিল দুরন্ত। পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে নামার সময় পাথরের সঙ্গে লড়াই করে আমার পথ তৈরি করতে হয়েছে। তখন আমি অশান্ত, কিন্তু প্রাণবন্ত। পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ আমাকে ভক্তির চোখে দেখত। আমার জলে তারা স্নান করত, পূজা করত। আমি তাদের ফসলের জন্য জল দিতাম।
সমতলে এসে আমার জীবন বদলে গেল। আমি প্রশস্ত হলাম। আমার দুই তীরে গ্রামের মানুষ বসতি গড়ল। আমার জলে মাছ ধরল, সেচের জন্য ব্যবহার করল। আমার জলের আশীর্বাদে তাদের ফসল ফলে উঠল। আমি খুশি ছিলাম, কারণ আমার জীবন মানুষের জন্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি দেখতে পেলাম মানুষের অদূরদর্শিতা।
সমতল পেরিয়ে আমি শহরে পৌঁছলাম। শহরে প্রবেশের পর আমি নিজের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লাম। শিল্পের বর্জ্য, নোংরা আবর্জনা আমার স্রোতে এসে মিশতে লাগল। আমার স্বচ্ছ জল দূষিত হয়ে গেল। মানুষ ভুলে গেল যে আমি তাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। আমার বুকের ওপর তৈরি হলো বাঁধ। আমার স্বাধীন গতিপথ রুদ্ধ হলো। আমি কষ্ট পেলাম, কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না।
বর্ষার সময় আমার রূপ অন্যরকম। তখন আমার গতি হয় প্রচণ্ড, শক্তিশালী। পাহাড় থেকে নেমে আসা বৃষ্টির জল আমাকে ভরিয়ে তোলে। কখনও কখনও আমি ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করি। আমি প্লাবন ঘটাই, কারণ মানুষ আমাকে বাঁচানোর বদলে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করেছে। আমি জানি, তখন আমাকে তারা শত্রু ভাবে। কিন্তু আমি তো নিজে কখনও কারো ক্ষতি করতে চাইনি।
আমার বুকেই জন্ম নিয়েছে বহু সভ্যতা। আমার তীরে দাঁড়িয়ে কবি গান লিখেছে, চিত্রকর আমাকে আঁকছে, আর মানুষ আমাকে ঘিরে জীবনের নানা কাজ করেছে। আমাকে ঘিরে হাটবাজার, শহর-বন্দর গড়ে উঠেছে। কিন্তু আজ আমি বিধ্বস্ত। আমার অস্তিত্ব হুমকির মুখে।
আমি শুধু প্রকৃতির নয়, মানুষের কল্পনারও একটি বড় অংশ। ছোটো ছোটো নৌকা আমার বুক দিয়ে ভেসে যায়, যেখানে থাকে কৃষকের স্বপ্ন। শিশুরা আমার জলে খেলে আনন্দ করে, আর মাঝি আমার স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গান গায়। আমার বুক দিয়ে ভেসে যাওয়া প্রতিটি নৌকোতে যেন মানুষের আশা আর পরিশ্রমের গল্প লেখা। আমি মানুষের জীবনকে সরাসরি ছুঁয়ে যাই, আর এটাই আমার অস্তিত্বের আনন্দ।
মানুষ যদি আমাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে, আমার জলকে দূষণমুক্ত রাখে, তবে আমি আবার প্রাণ ফিরে পাব। আমার বুক দিয়ে আমি আবার জীবন বিলিয়ে দিতে পারব। আমি কেবল একটি নদী নই, আমি প্রকৃতির এক জীবন্ত ইতিহাস।
আমি বলতে চাই, “মানুষ, আমাকে বাঁচাও। আমাকে রক্ষা করলেই নিজের ভবিষ্যৎ রক্ষা পাবে। কারণ আমি শুধু জলধারা নই, আমি তোমাদের জীবনধারা।” আমাকে সুরক্ষিত রাখা মানেই প্রকৃতি ও জীবনের প্রতি সম্মান জানানো।
MadhyamikQuestionPapers.com এ আপনি আরও বিভিন্ন বছরের প্রশ্নপত্রের উত্তরও পেয়ে যাবেন। আপনার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ কেমন লাগলো, তা আমাদের কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আরও পড়ার জন্য, জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য MadhyamikQuestionPapers.com এর সাথেই থাকুন।