আপনি কি ২০২৫ সালের মাধ্যমিক বাংলা Model Question Paper 8 (2025)-এর সঠিক উত্তর খুঁজছেন? তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই প্রতিবেদনে আমরা WBBSE এর বাংলা Model Question Paper 8 (2025)-এর প্রতিটি প্রশ্নের নিখুঁত ও বিস্তারিত উত্তর তুলে ধরেছি।
নিচে প্রশ্নোত্তরগুলো পরপর সাজানো হয়েছে, যাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সহজেই পড়ে বুঝতে পারে এবং প্রস্তুতিতে কাজে লাগাতে পারে। বাংলা মডেল প্রশ্নপত্র ও তার উত্তর মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ।
MadhyamikQuestionPapers.com ২০১৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে সমস্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও উত্তর একেবারে বিনামূল্যে সরবরাহ করে আসছে। ২০২৫ সালের সমস্ত মডেল প্রশ্নপত্র ও তার সমাধান এখানেই সবার আগে আপডেট করা হয়েছে।
আপনার প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করতে সম্পূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তরগুলো এখনই দেখে নিন!
Download 2017 to 2024 All Subject’s Madhyamik Question Papers
View All Answers of Last Year Madhyamik Question Papers
যদি দ্রুত প্রশ্ন ও উত্তর খুঁজতে চান, তাহলে নিচের Table of Contents এর পাশে থাকা [!!!] চিহ্নে ক্লিক করুন। এই পেজে থাকা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর Table of Contents-এ ধারাবাহিকভাবে সাজানো আছে। যে প্রশ্নে ক্লিক করবেন, সরাসরি তার উত্তরে পৌঁছে যাবেন।
Table of Contents
Toggle১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো:
১.১ তপনের মেসোমশাই পেশাগত দিক থেকে যা ছিলেন
(ক) লেখক,
(খ) সম্পাদক,
(গ) অধ্যাপক,
(ঘ) শিক্ষাবিদ।
উত্তর: (গ) অধ্যাপক
১.২ সপ্তাহে হরিদা বহুরুপী সেজে বাইরে যান
(ক) পাঁচদিন,
(খ) চারদিন,
(গ) একদিন,
(ঘ) দুদিন।
উত্তর: (গ) একদিন
১.৩ নদেরচাঁদ তাঁর স্ত্রীকে যে বিরহবেদনাপূর্ণ চিঠিটি লিখেছিল, তার পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল
(ক) চার,
(খ) পাঁচ,
(গ) ছয়,
(ঘ) সাত।
উত্তর: (খ) পাঁচ
১.৪ ‘আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি’ কবিতাটি কবির কোন্ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?
(ক) ‘নিহিত পাতাল ছায়া’,
(খ) ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’,
(গ) ‘দিনগুলি রাতগুলি’,
(ঘ) ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’।
উত্তর: (ঘ) ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’
১.৫ বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে-
(ক) শংকর,
(খ) ভয়ংকর,
(গ) দিগম্বর,
(ঘ) শুভংকর।
উত্তর: (খ) ভয়ংকর
১.৬ “প্রণমিয়া, ধাত্রীর চরণে,” এই ‘ধাত্রী’ হলেন
(ক) প্রভাযা,
(খ) কঙ্কাবতী,
(গ) সরমা,
(ঘ) অম্বুরাশি সুতা।
উত্তর: (ক) প্রভাযা
১.৭ ‘ক্যালিগ্রাফিস্ট’ বলা হয় তাদের, যারা
(ক) শব্দকুশলী,
(খ) বর্ণকুশলী,
(গ) বাক্যকুশলী,
(ঘ) লিপি-কুশলী।
উত্তর: (ঘ) লিপি-কুশলী
১.৮ অল্পবিদ্যা যে ভয়ংকরী তার প্রমাণ লেখক যেভাবে পেয়েছেন, তা হল
(ক) শব্দ আলোর আগে পৌঁছয়,
(খ) ওজোন গ্যাস স্বাস্থ্যকর,
(গ) বায়ুর ওজন আছে,
(ঘ) আলো অত্যন্ত ধীর গতি সম্পন্ন।
উত্তর: (খ) ওজোন গ্যামস্বাস্থ্যকর
১.৯ শ্রীপান্থ প্রথম যে ফাউন্টেন পেনটি কিনেছিলেন তার নাম
(ক) জাপানি পাইলট,
(খ) জাপানি পার্কার,
(গ) জাপানি সোয়ান
(ঘ) জাপানি শেফার্ড।
উত্তর: (ক) জাপানি পাইলট
১.১০ ‘তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।’ নিম্নরেখ পদটি
(ক) অপাদান কারক,
(খ) কর্মকারক,
(গ) করণ কারক
(ঘ) অধিকরণ কারক।
উত্তর: (গ) করণ কারন্ধ
১.১১ প্রদত্ত কোনটি তির্যক বিভক্তি?
(ক) রে,
(খ) থেকে,
(গ) শূন্য,
(ঘ) এ।
উত্তর: (ঘ) এ
১.১২ ‘ব্যাস’ শব্দের অর্থ কী?
(ক) পরিধি,
(খ) প্রতীতি,
(গ) বিভাজন,
(ঘ) বিস্তার।
উত্তর: (ঘ) বিস্তার
১.১৩ যে শান্ত সেই শিষ্ট = শান্তশিষ্ট – দৃষ্টান্তটি কোন কর্মধারয় সমাসের?
(ক) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়,
(খ) সাধারণ কর্মধারয়
(গ) উপমান কর্মধারয়,
(ঘ) রূপক কর্মধারয়।
উত্তর: (খ) সাধারণ কর্মধারয়
১.১৪ ভুলগুলো তোমাদের এখনই শুধরোতে বলছি। অর্থগত দিক থেকে এটি একটি
(ক) নির্দেশক বাক্য,
(খ) অস্ত্যর্থক বাঝা
(গ) প্রশ্নবাচক বাক্য,
(ঘ) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য।
উত্তর: (ঘ) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য
১.১৫ যে বাক্যে সাধারণত কোনো কিছুর বর্ণনা বা বিবৃতি থাকে, তাকে বলা হয়
(ক) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য,
(খ) নির্দেশক বান্ধ
(গ) আবেগসূচক বাক্য,
(ঘ) প্রশ্নবোধক বাক্য।
উত্তর: (খ) নির্দেশক বান্ধ
১.১৬ ‘ঢাক বাজে’- এটি কোন বাচ্য?
(ক) কর্তৃবাচ্য,
(খ) কর্মবাচ্য,
(গ) কর্মকর্তৃবাচ্য,
(ঘ) ভাববাচ্য।
উত্তর: (গ) কর্মকর্তৃবাচ্য
১.১৭ ‘তোমার কথা আমার চিরদিনই মনে থাকবে’ এটি হল
(ক) কর্তৃবাচ্য,
(খ) কর্মবাচ্য,
(গ) ভাববাচ্য,
(ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য।
উত্তর: (খ) কর্মবাচ্য
২। কমবেশি ২০টি শব্দে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:
২.১ যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.১.১ ‘ইত্যবসরে এই ব্যাপার।’ কোন্ ব্যাপারের কথা বলা হয়েছে?’
উত্তর: উদ্ধৃতাংশে অপূর্বর বাড়িতে চুরির ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়েছে। অপূর্ব অফিসে ব্যস্ত থাকার কারণে এবং তেওয়ারি ও বর্মা নাচের অনুষ্ঠান দেখতে যাওয়ায় বাড়িটি একেবারেই ফাঁকা ছিল। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চোরেরা অপূর্বর বাড়িতে চুরি করে। লেখক এখানে এই ব্যাপারের কথা বলেছেন।
২.১.২ ‘নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হইয়া গেল।’নদেরচাঁদ কেন স্তম্ভিত হয়ে গেল?
উত্তর: ব্রিজের কাছে এসে নদীর দিকে প্রথমবার তাকিয়ে নদীর এই উন্মত্ত চেহারা দেখেই নদেরচাঁদ স্তম্ভিত হয়েছিলো।
২.১.৩ ‘অদল বদল’ গল্পটি কে বাংলায় তরজমা করেছেন।
উত্তর: অদল বদল’ গল্পটি বাংলায় তরজমা করেছেন অর্ঘ্যকুসুম দত্তগুপ্ত ।
২.১.৪ “কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল!” কোন কথা শুনে তপনের চোখ ‘মার্বেল’ হয়ে গিয়েছিল?
উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প থেকে আলোচ্য অংশটি নেওয়া হয়েছে। নতুন মেসোমশাই, মানে যাঁর সঙ্গে এই কদিন আগে তপনের ছোটোমাসির বিয়ে হয়ে গেল দেদার ঘটাপটা করে, সেই তিনি নাকি বই লেখেন। সে সব বই নাকি ছাপাও হয়। অনেক বই ছাপানো হয়েছে মেসোমশাই এর । মানে-তপনের নতুন মেসোমশাই একজন লেখক। সত্যিকার লেখক। এ কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল।
২.১.৫ “হরিদার জীবনের ভাতের হাঁড়ি মাঝে মাঝে শুধু জল ফুটিয়েই সারা হবে।”- কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: এই কথার অর্থ হলো, হরিদার জীবনে দারিদ্র্য চরম রূপ নেবে। তিনি কখনও কখনও এতটাই অভাবগ্রস্ত থাকবেন যে, ভাত রান্না করার মতো চালও তাঁর থাকবে না। হাঁড়িতে শুধু জল ফুটবে, কিন্তু সেই জলে চাল ফেলার সামর্থ্যও থাকবে না। এটি হরিদার ভবিষ্যৎ জীবনের কঠিন আর্থিক অবস্থার প্রতীক।
হরিদার চরিত্রে সন্ন্যাসীর মতো একাগ্রতা ও আত্মত্যাগ থাকলেও বাস্তব জীবনে তা দারিদ্র্যের ভার কমাতে পারবে না। সেজন্য কথক অনুভব করেন, হয়তো অদৃষ্ট হরিদার এই ভুল—অর্থাৎ বাস্তবতা উপেক্ষা করে চরিত্রে এতটাই একাত্ম হওয়া—কখনও ক্ষমা করবে না।
২.২ যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.২.১ ‘ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!’ কী ছড়ানো রয়েছে?
উত্তর: ‘ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে!’ কাছে দূরে ছড়ানো রয়েছে শিশুদের শব।
২.২.২ ‘মাভৈঃ মাভৈঃ।’ এমন উচ্চারণের কারণ কী?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় “মাভৈঃ মাভৈঃ” উচ্চারণটি একটি প্রতীকী শব্দরূপে ব্যবহৃত হয়েছে। সংস্কৃত শব্দ “মাভৈঃ” অর্থ “ভয় নেই” বা “ভয় করো না”। কবি এই শব্দের মাধ্যমে পরাধীন ভারতবাসীর মনে সাহস জাগাতে চেয়েছেন।
যখন চারদিকে প্রলয়ের উল্লাস—ধ্বংস, হিংসা ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছে, তখন সেই পরিস্থিতিতে হতাশ ভারতবাসীর মধ্যে ভয় দূর করে, তাঁদের অন্তরে সাহস ও নির্ভীকতার আগুন জ্বালানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
এইভাবে “মাভৈঃ মাভৈঃ” উচ্চারণটি এক ধরনের উজ্জীবনী মন্ত্র, যা ভারতবাসীকে জাগিয়ে তোলে সংগ্রামের পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য।
২.২.৩ “প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে” ‘প্রাচী ধরিত্রী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আফ্রিকা” কবিতায় “প্রাচী ধরিত্রীর বুকের থেকে” কথাটিতে ‘প্রাচী ধরিত্রী’ বলতে বোঝানো হয়েছে প্রাচীন ও পবিত্র ভূমি—বিশেষত আফ্রিকা মহাদেশকে, যা মানব সভ্যতার এক আদিম উদ্ভবভূমি হিসেবেও বিবেচিত।
এখানে “প্রাচী” মানে প্রাচীন বা পূর্ব, আর “ধরিত্রী” মানে ধরণী বা পৃথিবী/মা-ভূমি। এইভাবে কবি আফ্রিকাকে পৃথিবীর এক আদিম ও সভ্যতাপূর্ণ জননীভূমি হিসেবে চিত্রিত করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, এই আফ্রিকা-ই এক সময় সভ্যতা, সংস্কৃতি, সাহস ও শক্তির প্রতীক ছিল। কিন্তু ঔপনিবেশিক শক্তির নিষ্ঠুরতায় সেই ভূমিই আজ নিপীড়নের শিকার।
অর্থাৎ, এখানে আফ্রিকাকে এক প্রাচীন, মহিমান্বিত জননী ভূমি রূপে উপস্থাপন করা হয়েছে।
২.২.৪ বর্ম কী? বর্ম কখন ব্যবহার করা হয়?
উত্তর: বর্ম হল এক ধরনের রক্ষাকবচ বা আবরণী বস্তু, যা শরীরকে আঘাত, অস্ত্রের আক্রমণ বা বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
বর্ম ব্যবহার করা হয়:
যুদ্ধক্ষেত্রে যোদ্ধারা নিজেদের শরীরকে বাঁচানোর জন্য বর্ম পরিধান করে।
২.২.৫ “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।” ‘আর’ শব্দটি ব্যবহারের কারণ কী?
উত্তর: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার উদ্ধৃত এই পঙ্ক্তিতে “আর” শব্দটির ব্যবহার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। “আর” শব্দটি এখানে দুটি বিপরীত চিত্রকে যুক্ত করেছে—একদিকে যুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংস ও মৃত্যুর বিভীষিকা, অন্যদিকে একটি মেয়ের নিঃশব্দ ভালোবাসা ও অপেক্ষা।
যুদ্ধ শেষ, রক্ত, লোহা, ধ্বংস—সবকিছুর শেষে যখন আশার আর কিছুই থাকে না, তখনও “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়” পঙ্ক্তিটি এক নিঃশব্দ ভালোবাসার প্রতীক হয়ে ওঠে।
এই “আর” শব্দটি তাই যুদ্ধ ও প্রেম, ধ্বংস ও মানবিকতার, অবসান ও সম্ভাবনার মাঝখানে এক সংযোগসূত্র হিসেবে কাজ করেছে। এটি বোঝায়, সমস্ত ভয়াবহতার পরেও মানবিক সম্পর্ক, ভালোবাসা ও আশাই টিকে থাকে।
২.৩ যে-কোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.৩.১ “লেখে তিনজন” এই ‘তিনজন’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ রচনায় ব্যবহৃত উদ্ধৃতাংশে লেখে তিনজন বলতে বোঝানো হয়েছে কালি, কলম এবং মনকে।
২.৩.২ ‘সম্পাদকের উচিত’ সম্পাদকের কী উচিত?
উত্তর: রাজশেখর বসুর মতে, বাংলায় প্রকাশিত অনেক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে অল্পবিদ্যার কারণে ভুল তথ্য ছাপা হয়। এই ভুল তথ্য পাঠকের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই তিনি মনে করেন, অবিখ্যাত লেখকের বৈজ্ঞানিক রচনা প্রকাশের আগে সম্পাদকের উচিত সেই লেখা অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞজনকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নেওয়া।
এতে প্রকাশিত তথ্যের যথার্থতা বজায় থাকবে এবং পাঠকরাও প্রকৃত জ্ঞান লাভ করবে।
২.৩.৩ পরিভাষার উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: পরিভাষার উদ্দেশ্য হল অর্থ সুনির্দিষ্টকরণ ও ভাষা ও ভাবের সংক্ষিপ্তকরণ ।
২.৩.৪ কলমের নিবকে কখন খুনির ভূমিকায় দেখা গেছে?
উত্তর: বাংলা সাহিত্যে ‘ কঙ্কাবতী ’ ও ‘ ডমরুধর ’ – এর স্রষ্টা ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় নিজের হাতের কলম অসাবধানতাবশত বুকে বিঁধে মারা যান ।
২.৪ যে-কোনো আটটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
২.৪.১ ‘তিনি ছুটলেন কালির সন্ধানে’ নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো।
উত্তর: মূল শব্দ: কালি
কারক: অধিকরণ কারক
বিভক্তি: এ বিভক্তি
২.৪.২ ‘জ্বলে গেল আগুনে’ নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো।
উত্তর: নিম্নরেখ পদ: আগুনে
কারক: অধিকরণ কারক
বিভক্তি: ৩য় (তৃতীয়া) বিভক্তি
২.৪.৩ বিপরীতার্থক দ্বন্দ্বের দুটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: দিনরাত – (দিন + রাত) সুখদুঃখ – (সুখ + দুঃখ)
২.৪.৪ বিগ্রহবাক্য কাকে বলে?
উত্তর: বিগ্রহবাক্য হলো সেই ব্যাকরণগত বিশ্লেষণ, যার মাধ্যমে যৌগিক (যোজিত) বা সমাসবদ্ধ শব্দকে খণ্ড করে তার মূল শব্দ ও অর্থ বোঝানো হয়। এটি মূলত সমাসবদ্ধ শব্দের ব্যাখ্যামূলক বিশ্লেষণ।
২.৪.৫ আর কোনো ভয়নেই।
প্রশ্নবোধক বাক্যে পরিবর্তন করো।
উত্তর: আর কোনো ভয়নেই।
প্রশ্নবোধক বাক্যে পরিবর্তন—
“আর কোনো ভয় আছে কি?”
২.৪.৬ সন্দেহবাচক বাক্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: সন্দেহবাচক বাক্যের উদাহরণ: সে বোধহয় আজ স্কুলে আসবে না।
২.৪.৭ ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।’ ভাববাচ্যে পরিবর্তন করো।
উত্তর: ‘তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।’ ভাববাচ্যে পরিবর্তন: “তাদের আর স্বপ্ন দেখা হলো না।”
২.৪.৮ খণ্ডবাক্য ও স্বাধীনবাক্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: খণ্ডবাক্যের উদাহরণ:
যেহেতু তুমি গেছ, তাই আমি আসিনি।
স্বাধীন বাক্যের উদাহরণ:
আজ আকাশ মেঘলা।
২.৪.৯ বাচ্যান্তরের সময় কী কী অক্ষুন্ন থাকে?
উত্তর: বাচ্যান্তরের সময় বাক্যের অর্থ, কালের ব্যবহার এবং কর্ম বা কর্তার সম্পর্ক অক্ষুন্ন থাকে।
বাচ্যান্তরের সময় বাক্যের মূল অর্থ, ক্রিয়ার কাল এবং কর্তা ও কর্মের পারস্পরিক সম্পর্ক অক্ষুন্ন থাকে। শুধু বাক্যের গঠন বা বাচ্য পরিবর্তিত হয়, কিন্তু মূল বক্তব্য পরিবর্তন হয় না।
২.৪.১০ ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে?
উত্তর: যে বহুব্রীহি সমাসে কোনো বস্তু বা ব্যক্তির কোনো গুণ বা ধর্মের অনুপস্থিতি বোঝায়, তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে।
৩। প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কমবেশি ৬০ শব্দে উত্তর দাও:
৩.১ যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৩.১.১ ‘গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের’ কী কারণে তপনের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল?
উত্তর: একদিন দুপুরে চারিদিক যখন নিস্তব্ধ, তপন খাতা ও কলম নিয়ে মামাবাড়ির তিনতলার সিঁড়িতে বসে। সারাদুপুর ধরে সে একটি আস্ত গল্প লিখে ফেলে। গল্পটি শেষ করে নিজেই অবাক হয়ে যায়। গল্প শেষ হওয়ার পর আনন্দ ও উত্তেজনায় তপনের সারা শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে।
৩.১.২ ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদীর বিদ্রোহী হয়ে ওঠার কারণ কী বলে তোমার মনে হয়?
উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত “নদীর বিদ্রোহ” গল্পে নদীর বিদ্রোহী হয়ে ওঠার পেছনে মানুষের নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর প্রকৃতিই মূল কারণ বলে মনে হয়। গল্পের প্রধান চরিত্র নদের চাঁদ নদীর উন্মাদ, উত্তাল ও ভয়ঙ্কর রূপ দেখে উপলব্ধি করে যে মানুষ নিজের সুবিধার জন্য প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম ভেঙে ফেলেছে।
এই অনিয়মই প্রকৃতিকে করেছে প্রতিশোধপরায়ণ। মানুষের তৈরি স্মৃতিচিহ্ন— যেমন নতুন ব্রিজ— প্রকৃতির এই রুদ্র রূপের সামনে কতটা অসহায়, তা অনুভব করে নদের চাঁদ। নদী যেন মানুষের উপর প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। এই ভাবনাই নদের চাঁদের মনে নতুন ব্রিজ নিয়ে তার গর্বকে চূর্ণ করে দেয়।
৩.২ যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৩.২.১ ‘অতি মনোহর দেশ’ কোন্ কবিতাংশ থেকে গৃহীত? মনোহর দেশটির বর্ণনা দাও।
উত্তর: কবি সৈয়দ আলাওল রচিত ‘পদ্মাবতী’ কাব্য থেকে ‘সিন্ধুতীরে’ কবিতাটি গৃহীত হয়েছে। আলোচ্য অংশে বর্ণিত হয়েছে, সমুদ্রের ঢেউ পদ্মাবতীর ভেলাকে যেখানেই নিয়ে যায়, সেখানেই জলের মধ্যে এক অপূর্ব সুন্দর নগরীর দেখা মেলে। এই নগরীর নামই ‘দিব্যপুরি’।
দিব্যপুরি নগরীর বিশেষত্ব হলো এর অনন্য সামাজিক পরিবেশ। সেখানে কোনো দুঃখ-কষ্ট বা দুর্দশার চিহ্নমাত্র নেই। বরং এই নগরীতে বিরাজমান সত্য ধর্ম, সৎ আচরণ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবনব্যবস্থা।
এইভাবে কবি এক স্বপ্নময়, শান্তিময়, আদর্শ সমাজের চিত্র তুলে ধরেছেন।
৩.২.২ “এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।” বস্তা কোন্ কলঙ্কের কথা বলেছেন? সে কীভাবে ‘কলঙ্ক’ দূর করতে চেয়েছেন?
উত্তর: উক্ত বাক্যে বক্তা ইন্দ্রজিৎ ‘কলঙ্ক’ বলতে সেই অপবাদকে বুঝিয়েছেন, যা তাঁর জীবিত থাকা সত্ত্বেও তাঁর পিতা রাবণের যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়াকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে। ইন্দ্রজিতের মতে, একজন যোগ্য পুত্র থাকার পরও যদি রাবণ স্বয়ং যুদ্ধ করে, তবে তা রাক্ষস রাজবংশের মর্যাদার জন্য লজ্জাজনক হবে। এটি লঙ্কার জন্য কলঙ্কস্বরূপ।
এই কলঙ্ক দূর করতে ইন্দ্রজিৎ নিজেই যুদ্ধের ভার নিতে চায়। রামচন্দ্রের আক্রমণ, বীরবাহুর মৃত্যু প্রভৃতি ঘটনায় লঙ্কার সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে—এই উপলব্ধি থেকে ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে পরাজিত করার সংকল্প নেয়। সে রাবণের অনুমতি চায় যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য, যাতে সে নিজের বীরত্ব প্রদর্শন করে রাক্ষস বংশের এই কলঙ্ক মুছে ফেলতে পারে।
৪। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৪.১ “বাবুজি, এ-সব কথা বলার দুঃখ আছে।” বস্তা কে? কোন্ কথার পরিপ্রেক্ষিতে সে একথা বলেছে?
উত্তর: বাবুজি, এ-সব কথা বলার দুঃখ আছে।” বস্তা রামদাস।
ভারতীয় বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক অপূর্বর কাছে আত্মীয়-স্বজনের থেকেও আপন। অপূর্ব মনে করে, আত্মীয়স্থানীয় নিমাইবাবুর চেয়ে সব্যসাচী অনেক বেশি হৃদয়ের কাছাকাছি। এই ঘনিষ্ঠতার জন্যই অপূর্ব বিপ্লবীদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। রামদাস, বুঝতে পারে যে অপূর্ব এই ঘনিষ্ঠতার ফলে ইংরেজ সরকারের রোষানলে পড়তে পারে। সে আশঙ্কা করে, অপূর্বের বিপদ ঘনিয়ে আসছে। তাই বক্তার ধারণা, রামদাসের দুঃখের কারণ অপূর্বের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা ও সম্ভাব্য বিপদ।
৪.২ ‘অদল বদল’ গল্পটিতে অমৃত ইসাবের মধ্যে যে ভালোবাসা ও প্রকৃত বন্ধুত্ব প্রকাশিত হয়েছে, তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
উত্তর: পান্নালাল প্যাটেলের ‘ অদল বদল ‘ গল্প অনুসারে , ইসাবের বাবা পাঠানের মুখ থেকে অমৃত ও ইসাবের পারস্পরিক ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।
পান্নালাল প্যাটেলের’ অদল বদল’ গল্পের অন্যতম প্রধান চরিত্র হল অমৃত। অমৃত ও ইসাব দুই অভিন্নহৃদয় বন্ধু । তারা একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়ে। রাস্তার মোড়ে মুখোমুখি বাড়িতে থাকে। এসব বাইরের মিল ছাড়াও বিকেলে তারা দুজনে দুটি একইরকম দেখতে নতুন জামা পরে বেরোয়। এই দৃশ্য দেখে পাড়ার একদল দুষ্টু ছেলে বদ ফন্দি আঁটে। উভয়ের জামা নষ্ট করার মতলবে কালিয়া নামে একটি ছেলে অমৃতকে খোলা মাঠে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। ধস্তাধস্তির ফলে ইসাবের জামাটি ছিঁড়ে যায়।’ রণভূমি’ ত্যাগ করার পর দুজনেই টের পায় নতুন জামা ছেঁড়ার অপরাধে আজ কপালে তাকে বাবার মারের হাত থেকে বাঁচাতে মা থাকলেও ; মাতৃহারা ইসাবের কেউ নেই। তাই বন্ধুকে মারের হাত থেকে রক্ষা করতে সে তাকে নিজের অক্ষত জামাটি দিয়ে দেয়। ইসাব ইতস্তত করলেও নিরুপায় হয়ে রাজি হয়। বাড়ি ফেরার পরে অমৃতের মা জামা দেখে ভ্রু কুঁচকালেও; হোলির দিন বলে মাফ করে জামাটি রিফু করে দেন। এভাবেই উভয়ে বাঁচলেও ইসাবের বাবা সমস্ত ঘটনা ও দেখে ফেলেন দুই বন্ধুর ভালোবাসা।
৫। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৫.১ “তাঁরা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।” কারা স্বপ্ন দেখতে পারল না? তাদের স্বপ্ন দেখতে না পারার কারণ ‘অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।
উত্তর: পাবলো নেরুদা রচিত ‘অসুখী একজন’ কবিতায় দেবতাদের সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে। কবি বলেছেন তারা (অর্থাৎ, দেবতারা) আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
শান্ত, হলুদ দেবতারা হাজার হাজার বছর ধরে ধ্যানে ডুবে ছিল। মানুষে মানুষে বিবাদ বাঁধলেও দেবতারা সবসময় নির্বিরোধ প্রকৃতির হয়। তাই সারাক্ষণ তারা স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকত। তারপর হঠাৎ একদিন শহরজুড়ে যুদ্ধের ঘন্টা বেজে উঠে। বহু মানুষের মৃত্যু হল সেই সর্বগ্রাসী যুদ্ধের আগুনে। ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ল এবং দেবতারাও ভূপতিত হল। এইজন্য তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।
৫.২ “ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর? প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন!” কোন্ ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে? প্রলয়কে ‘নূতন সৃজন-বেদন’ বলার তাৎপর্য কী?
উত্তর: এই পঙক্তিতে কবি যে ধ্বংসের কথা বলেছেন, তা সমাজের সমস্ত অন্যায়, অবিচার, শোষণ, অত্যাচার, পরাধীনতার গ্লানি এবং মানবতাবিরোধী শক্তির সমাপ্তিকে বোঝায়। কবি কাজী নজরুল ইসলামের দৃষ্টিতে এই ধ্বংস কেবল সংহার নয়, বরং একটি বিপ্লবী পরিবর্তনের আবশ্যিক পর্ব। তাই তিনি মহাকালের রুদ্ররূপ মহাদেবের সংহারলীলাকে আহ্বান জানিয়েছেন, যা ধ্বংসের মাধ্যমে সমাজকে পরিশুদ্ধ করবে এবং মানবমুক্তির পথ প্রশস্ত করবে।
“প্রলয় নূতন সৃজন-বেদন” বাক্যাংশটির তাৎপর্য বিশেষ তাৎপর্যময়। এখানে ‘প্রলয়’ অর্থাৎ ধ্বংসের মধ্যে নিহিত রয়েছে নতুন সৃষ্টির বীজ। কবির মতে, এই ধ্বংস কেবল অবসানের দিকেই ইঙ্গিত করে না; বরং এটি একটি নবজাগরণের সূচনা। যেমন নবজন্মের সময় মায়ের বেদনাকে সহ্য করতে হয়, তেমনই সমাজে নতুনের আগমনের আগে পুরাতনের বিলয় অনিবার্য। সেই প্রলয়-পর্বেই লুকিয়ে থাকে ভবিষ্যতের আশার আলো।
এই কারণে কবি ধ্বংসকে ভয়াবহ না ভেবে এক নবসৃজনের বেদনারূপে তুলে ধরেছেন, যা পাঠকের মনে আশা, উদ্দীপনা ও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে।
৬। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৬.১ কম্পিউটার কাদের, কিসের জাদুঘরে পাঠাবে তা প্রবন্ধ অনুসারে আলোচনা করো।
উত্তর: প্রবন্ধ অনুযায়ী, কম্পিউটার আধুনিক প্রযুক্তির প্রতীক হিসেবে আজ মানুষের লেখার মাধ্যম হয়ে উঠেছে। লেখকের মতে, এই যান্ত্রিক প্রযুক্তি একসময় কালি, কলম, দোয়াত, ফাউন্টেন পেন, এমনকি বল-পেনকেও বিলুপ্ত করে দেবে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ভবিষ্যতে এই সমস্ত জিনিসপত্র হয়তো জাদুঘরের প্রদর্শনীর অংশ হয়ে দাঁড়াবে।
এই প্রসঙ্গে শ্রীপান্থ ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, কম্পিউটার একদিন “আমাদের”, অর্থাৎ পুরোনো দিনের লেখার সমস্ত উপকরণকে জাদুঘরে পাঠাবে। সেখানে মানুষেরা দেখবে—কালির শিশি, দোয়াত, কাঠের খুদে বক্স, কলমের খোল, লাল, সবুজ, নীল কালি, চেরার ফাউন্টেন পেন, এমনকি বল-পেন পর্যন্ত। এসব জিনিস তখন নস্টালজিয়া হয়ে থাকবে, কেবল ইতিহাসের অংশ হিসেবে।
লেখক এই পরিবর্তনের মধ্যে যান্ত্রিকতার আগ্রাসন ও আবেগের অভাব লক্ষ্য করেন। তাই এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি কালি-কলমের প্রতি তাঁর গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করেছেন।
৬.২ “আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন”- ‘শব্দের ত্রিবিধ কথা’ কী? ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধে এই ‘ত্রিবিধ কথা’র প্রসঙ্গ এসেছে-কেন?
উত্তর: উক্তিটি রাজশেখর বসুর রচিত ‘বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান’ প্রবন্ধ থেকে গৃহীত। এখানে ‘শব্দের ত্রিবিধ কথা’ বলতে বোঝানো হয়েছে—অভিধা, লক্ষণা ও ব্যাঞ্জনা।
অভিধা হলো শব্দের আক্ষরিক বা আভিধানিক অর্থ। যেমন—‘দেশ’ শব্দের অভিধাত্মক অর্থ হলো কোনো ভৌগোলিক স্থান বা রাষ্ট্র।
লক্ষণা তখন হয়, যখন শব্দের আক্ষরিক অর্থ নয়, বরং প্রসঙ্গানুসারে গৌণ বা লক্ষ্যার্থ বোঝানো হয়। যেমন—‘দেশের লজ্জা’ কথাটিতে ‘দেশ’ বলতে দেশের মানুষ বোঝানো হয়েছে।
ব্যাঞ্জনা হল শব্দের গভীর বা সূক্ষ্মতর অর্থ, যা প্রতীকী বা ভাবার্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন—‘অরণ্যে রোদন’ কথাটিতে ‘অরণ্য’ মানে শুধু বন নয়, বরং বোঝানো হয়েছে নিঃসঙ্গতা বা অর্থহীনতা।
এই প্রবন্ধে ‘ত্রিবিধ শব্দার্থের’ প্রসঙ্গ এসেছে, কারণ লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে সাহিত্যিক ভাষা ও বৈজ্ঞানিক ভাষার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সাহিত্যিক ভাষায় লক্ষণা ও ব্যাঞ্জনার ব্যবহার বেশি, কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভাষায় অভিধার্থ অর্থাৎ সরল, স্পষ্ট ও নির্ভুল শব্দচয়ন জরুরি। তাই তিনি উদাহরণ দিয়ে দেখিয়েছেন কিভাবে শব্দের নানা অর্থ বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে, যা বিজ্ঞানের ভাষায় বর্জনীয়।
৭। কমবেশি ১২৫ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৭.১ ‘স্পর্ধা তোমাদের আকাশস্পর্শী হয়ে উঠেচে’ এখানে কাদের স্পর্ধা, কেন আকাশস্পর্শী হয়ে উঠেছিল?
উত্তর: এখানে ‘তোমাদের স্পর্ধা’ বলতে মীরজাফর, রাজবল্লভ ও রায়দুর্ল্লভ প্রমুখ ষড়যন্ত্রকারীদের বোঝানো হয়েছে। এদের মধ্যে মীরজাফরের লক্ষ্য ছিল বাংলার মসনদ দখল করা, আর তার অন্যতম প্রধান সহযোগী ছিলেন ঘসেটির দেওয়ান রাজবল্লভ। এঁরা নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।
একবার রাজসভায় নবাব সিরাজদ্দৌলার দৃঢ় ও স্পষ্ট প্রত্যুত্তরে রাজবল্লভের ‘ভালো মানুষ’ সাজার মুখোশ খুলে যায়। তখন মীরজাফর রাজবল্লভকে বাঁচানোর চেষ্টা করে নবাবকে বলেন, সম্মানিত লোকদের এভাবে অপমান করা হলে তাঁরা আর নবাবের পক্ষে অস্ত্রধারণ করবেন না। এই কথার উত্তরে মোহনলাল এবং পরে মীরমদন প্রশ্ন তোলেন—মীরজাফর আদৌ কখনো নবাবের জন্য অস্ত্রধারণ করেছেন কি না।
এই ঘটনার পর মীরজাফর অপমানিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন—‘স্পর্ধা তোমাদের আকাশস্পর্শী হয়ে উঠেচে’। এই উক্তিতে বোঝা যায়, তিনি মীরমদন ও মোহনলালের তীব্র সমালোচনা ও সত্য প্রকাশে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে এমন মন্তব্য করেন।
৭.২ “এইবার হয় ত, শেষ যুদ্ধ!” কোন্ যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে? বস্তা এই যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলেছেন কেন?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত অংশটি বিখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত ঐতিহাসিক নাটক ‘সিরাজদ্দৌলা’ থেকে গৃহীত।
যে যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে:
এই অংশে পলাশীর যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে।
‘শেষ যুদ্ধ’ বলার কারণ:
সিরাজদ্দৌলা বাংলার নবাব হওয়ার পর থেকেই নানা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হন। তাঁর সভাসদ ও আত্মীয়স্বজনদের একাংশ তাঁর সিংহাসন লাভে ক্ষুব্ধ ছিলেন এবং ইংরেজরা সেই অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে তাঁদের মনের বিষ ঢেলে দেয়। ফলে নবাবের বিরুদ্ধেই তাঁর নিজের সভাসদরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি ইংরেজরাও সরাসরি যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে, যার ইঙ্গিত অ্যাডমিরাল ওয়াটসনের চিঠি থেকেই পাওয়া যায়।
সিরাজদ্দৌলা বুঝতে পেরেছিলেন যে, পলাশীর প্রান্তরে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ঘনিয়ে আসছে। তাই তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন—‘বাংলার আকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা’। তিনি পলাশীর যুদ্ধকে ‘শেষ যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করেন, কারণ তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল—এই যুদ্ধের ফলাফলই নির্ধারণ করবে বাংলার ভবিষ্যৎ। যদি তিনি পরাজিত হন, তবে শুধু তাঁর জীবনেরই অবসান হবে না, বাংলার স্বাধীনতারও সূর্য অস্তমিত হবে। তাই এই যুদ্ধ তাঁর কাছে জীবন-মরণের ও জাতীয় স্বাধীনতার লড়াই হয়ে দাঁড়ায়।
৮। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
৮.১ দারিদ্র্য আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে কোনির যে লড়াই, তা সংক্ষেপে আলোচনা করো।
উত্তর: ‘কোনি’ উপন্যাসের সারাংশ
(লেখক: মতি নন্দী)
বিশিষ্ট সাহিত্যিক মতি নন্দীর লেখা ‘কোনি’ উপন্যাসটির প্রধান তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র কোনি ওরফে কনকচাঁপা পাল। কোনি এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তাদের পরিবার ছিল ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয়’ অবস্থায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল কোনির দাদা, যিনি যক্ষায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর কোনির পরিবার আরও চরম দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে যায়।
জীবনের কঠোর বাস্তবতার সঙ্গে লড়াই করলেও কোনি জানত না, সে সাঁতারে একদিন চ্যাম্পিয়ন হতে পারবে। গঙ্গার ঘাট থেকে সাঁতার প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ (যিনি ‘ক্ষিদ্দা’ নামে পরিচিত) কোনিকে আবিষ্কার করেন। তিনি কোনিকে সাঁতার শেখানোর জন্য জুপিটার ক্লাবে নিয়ে যান। কিন্তু ক্লাবের সদস্য হরিচরণ, ধীরেন ঘোষ ও বদু চ্যাটার্জিরা ষড়যন্ত্র করে কোনিকে সেখানে ভর্তি হতে দেয় না।
পরে ক্ষিতীশবাবু কোনির জন্য অ্যাপেলো ক্লাবে সাঁতার শেখার ব্যবস্থা করেন। জুপিটার সুইমিং ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় কোনি সুযোগ না পেলেও, অ্যাপেলো ক্লাবের বার্ষিক প্রতিযোগিতায় সে বিশিষ্ট সাঁতারু অমিয়াকে হারিয়ে দেয়।
পরবর্তী সময়ে মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে দলের নির্বাচনের সময়ও কোনিকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু বালিগঞ্জ ক্লাবের ট্রেনার প্রণবেন্দুর উদ্যোগে হরিচরণের দল বাধ্য হয়ে কোনিকে অন্তর্ভুক্ত করে। মাদ্রাজে গিয়ে কোনিকে সতীর্থদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে চোরের অপবাদ এবং অপমান সহ্য করতে হয়। এমনকি বিনা দোষে তাকে চড়ও খেতে হয়।
জাতীয় সাঁতার দলে কোনির নাম পাঠানো হয়নি। ক্ষিতীশবাবুর যাওয়ার অনুমতি না থাকায় কোনিকে নানা বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু অবশেষে কর্মকর্তারা বাধ্য হয়ে কোনিকে জাতীয় দলে স্থান দেন। সব দারিদ্র্য, অবহেলা ও অপমানকে জয় করে কোনি শেষ পর্যন্ত দেশের সেরা সাঁতারু রমা যোশিকে হারিয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয় এবং বাংলার হয়ে ট্রফি জয় করে।
এই ছিলো দারিদ্র্য আর বঞ্চনার বিরুদ্ধে কোনির লড়াই।
৮.২ ‘কোনি’ উপন্যাসে সাঁতার ক্লাবের রাজনীতির যে পরিচয় পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে শুধু এক সাঁতারুর সংগ্রামের কাহিনি নয়, খেলাধুলার জগতে বিদ্যমান রাজনীতি ও পক্ষপাতিত্বের নগ্ন রূপও তুলে ধরা হয়েছে।
জুপিটার ক্লাবের কোচ ক্ষিতীশ সিংহ যখন দরিদ্র ঘরের মেয়ে কোনিকে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন, তখন ক্লাবের সম্পাদক মৃণাল দত্ত, প্রণবেন্দুদের মতো কর্তারা তার বিরোধিতা করেন। তারা চাননি একজন বস্তির মেয়ে ক্লাবের মুখ হয়ে উঠুক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা ক্লাব থেকে কোনিকে তাড়িয়ে দেয় এবং ক্ষিতীশ সিংহকেও বাধ্য করেন পদত্যাগ করতে।
পরবর্তীতে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় এমনকি যোগ্য হয়েও কোনিকে বসিয়ে দেওয়া হয়, কারণ তিনি গরিব, পিছিয়ে পড়া সমাজের প্রতিনিধি। সুযোগ পায় হিয়া মিত্রদের মতো প্রভাবশালী পরিবারের মেয়েরা।
এই ঘটনাগুলোর মাধ্যমে লেখক দেখিয়েছেন, খেলার জগতে মেধা নয়, রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থ এবং গোষ্ঠীস্বার্থই অনেক সময় বড় হয়ে ওঠে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনির দৃঢ়তা ও ক্ষিতীশের সাহসিকতায় এই রাজনীতিকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়।
৮.৩ ‘কোনি’ উপন্যাসের কাহিনি অবলম্বনে স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী রূপে লীলাবতীর পরিচয় দাও।
উত্তর: লীলাবতী উপন্যাসের অন্যতম গৌণ চরিত্র হলেও, স্বামী ক্ষিতীশ সিংহের পাশে একজন আদর্শ সহধর্মিণী হিসেবে দৃঢ়ভাবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সহজ-সরল, পরিশ্রমী ও অত্যন্ত সহনশীলা এক গৃহবধূ, যিনি স্বামীর আদর্শ ও সংগ্রামের পথের সঙ্গী হন নিঃশব্দে।
ক্ষিতীশ যখন কোনির মতো দরিদ্র মেয়েকে সাঁতার শেখাতে চায়, তখন ক্লাব ও সমাজের নানা বাধা আসে। এমনকি তিনি চাকরি হারিয়ে ফেলেন, আয় বন্ধ হয়ে যায়। তবুও লীলাবতী কোনোরূপ অভিযোগ না করে স্বামীর পাশে থাকেন। তিনি নিজ হাতে কোনির জন্য জামা-কাপড় সেলাই করেন, খাওয়া-দাওয়ার দেখভাল করেন।
একজন মহীয়সী নারী হিসেবে তিনি বোঝেন, ক্ষিতীশ কেবল কোচ নন, একজন আদর্শ নির্মাতা। তাই স্বামীর আদর্শের পথ চলায় নিজেকে সাধ্যমতো উৎসর্গ করেন।
এইভাবে লীলাবতী নিঃশব্দে ত্যাগ ও ভালোবাসার মাধ্যমে একজন প্রকৃত সহধর্মিণীর পরিচয় দেন।
৯। চলিত গদ্যে প্রঙ্গানুবাদ করো:
The age we live in an age of science. It has been many wonderful inventions. All these inventions have made our life easy and comfortable. They are useful to us in many ways.
উত্তর: আমরা বিজ্ঞানযুগে বাস করছি। এই যুগে অনেক আশ্চর্যজনক আবিষ্কার হয়েছে। এই সব আবিষ্কার আমাদের জীবনকে সহজ ও আরামদায়ক করে তুলেছে। নানা দিক থেকে এগুলো আমাদের উপকারে আসে।
১০। কমবেশি ১৫০ শব্দে নীচের যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:
১০.১ ‘জাতীয়তাবাদ মানুষকে সংকীর্ণমনা করে তোলে’ এ বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি কাল্পনিক সংলাপ রচনা করো।
উত্তর:
জাতীয়তাবাদ: ঐক্যের পথ না সংকীর্ণতার?
রকি: শোন সমি, অনেকে বলে জাতীয়তাবাদ মানুষকে সংকীর্ণ করে তোলে। তুই কি একমত?
সমি: না পুরোপুরি না। আমি মনে করি, নিজের দেশকে ভালোবাসা খারাপ নয়। কিন্তু যখন কেউ ভাবে তার দেশই সেরা আর অন্য দেশগুলোকে ছোট করে দেখে, তখন সেটা সমস্যা।
রকি: হ্যাঁ, তখনই জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণতা হয়ে ওঠে। এর ফলে ভিন্ন জাতি ও সংস্কৃতির প্রতি সহানুভূতি কমে যায়।
সমি: একমত। জাতীয়তাবাদ যদি উদারভাবে চর্চা করা হয়, তবে তা মানুষকে এক করে, কিন্তু অন্ধ জাতীয়তাবাদ মানুষকে বিভক্ত করে।
রকি: তাই আমাদের উচিত নিজের দেশকে ভালোবাসার পাশাপাশি অন্যদেরও সম্মান করা।
সমি: ঠিক বলেছিস। সব দেশের প্রতি সমান শ্রদ্ধা থাকলেই আমরা সত্যিকারের মানবতাবাদী হতে পারব।
১০.২ ফেসবুকের অপব্যবহার শিক্ষার্থীর জীবনে এনেছে চরম বিশৃঙ্খলা এই নিয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।
উত্তর:
ফেসবুকের অপব্যবহার শিক্ষার্থীর জীবনে এনেছে চরম বিশৃঙ্খলা
নিজেস্ব সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার, জুন ১৭: বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ফেসবুক একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, এ মাধ্যমটির অপব্যবহার শিক্ষার্থীদের জীবনে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার সময় ফেসবুকে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে, ফলে পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যাচ্ছে। এছাড়া রাত জেগে ফেসবুক ব্যবহারের কারণে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কেউ কেউ ভুয়া খবর ও গুজবের ফাঁদে পড়ে বিপদেও পড়ছে।
অল্প বয়সে সম্পর্ক গড়ে তোলা, ব্যক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে পড়া এবং অনলাইনে আসক্তি শিক্ষার্থীদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে। ফেসবুকের এই নেতিবাচক প্রভাব থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করতে পরিবার, শিক্ষক ও সমাজের সচেতন ভূমিকা প্রয়োজন। তবেই আগামী প্রজন্মকে সুশৃঙ্খল ও সুস্থভাবে গড়ে তোলা সম্ভব।
১১। যে-কোনো একটি বিষয় অন্তলম্বনে রচনা লেখো: (কমবেশি ৪০০ শব্দে)
১১.১ বিশ্ব উষুায়ন।
উত্তর:
“বিশ্ব উষ্ণায়ন: একটি বিপজ্জনক ভবিষ্যতের অগ্রদূত”
বিশ্ব উষ্ণায়ন হলো পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার ক্রমাগত বৃদ্ধি। এটি প্রধানত মানবজাতির কার্যকলাপের কারণে ঘটে, বিশেষ করে কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বাড়ার কারণে। শিল্পায়ন, যানবাহন, বন উজাড় এবং জীবাশ্ম জ্বালানি দহন বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ। এর ফলে পরিবেশে বিপর্যয় ঘটছে এবং পৃথিবীর জলবায়ু ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে উঠছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের কারণে গ্লেসিয়ার গলছে, সমুদ্রের স্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা বেড়েই চলছে। বন্যা, হারিকেন, খরা ও অগ্ন্যুৎপাতের মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় বিশ্বব্যাপী বাড়ছে। এ কারণে মানুষের জীবনযাত্রা, ফসল ফলন এবং বন্যপ্রাণী জীবনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের সবচেয়ে বড় ফল হলো জলবায়ু পরিবর্তন। অনেক অঞ্চলে বৃষ্টি কমে যাচ্ছে, আবার কোথাও অতিরিক্ত বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে খাদ্য সংকট ও পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে। এছাড়া, সমুদ্রের উত্তাপ বৃদ্ধি পেয়ে প্রবালপ্রাচীর ধ্বংস হচ্ছে, যা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের জন্য বিপদজনক।
আমরা যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেই, তবে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। তাই বিশ্বের সকল দেশের উচিত কার্বন নির্গমন কমানো, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি ব্যবহার এবং বনায়ন বৃদ্ধি করা। প্রতিটি মানুষকে পরিবেশ সচেতন হয়ে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমাতে হবে। সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কঠোর নীতি গ্রহণ করে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রতিরোধের মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর ও সুস্থ পৃথিবী ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে পারব। আমাদের দায়িত্ব হলো প্রকৃতির প্রতি যত্ন নেওয়া, কারণ প্রকৃতি আমাদের জীবনদাতা। বিশ্ব উষ্ণায়ন মোকাবিলায় সবাই একজোট হয়ে কাজ করলে পৃথিবীকে বাঁচানো সম্ভব। তাই বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা খুব জরুরি।
১১.২ অতিমারি ও মানব সমাজ।
উত্তর:
শিরোনাম: অতিমারি—এক অদৃশ্য শত্রুর মুখোমুখি মানব সমাজ
বিশ্ব ইতিহাসে বহুবার নানা রোগব্যাধি মানুষের জীবনে আঘাত হেনেছে। তবে আধুনিক সভ্যতার এই যুগে ২০১৯ সালে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ অতিমারি মানব সমাজকে যেন এক নতুন করে চিন্তাভাবনার পথ দেখিয়ে দিয়েছে। এই অদৃশ্য ভাইরাস বিশ্ববাসীর স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে একপ্রকার থামিয়ে দিয়েছিল।
অতিমারির প্রভাবে বিশ্বজুড়ে তৈরি হয় ভয়াবহ পরিস্থিতি। অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়তে থাকে, চিকিৎসা সংকট দেখা দেয়। পাশাপাশি সংক্রমণ এড়াতে দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত বন্ধ থাকে। কর্মহীন হয়ে পড়ে লাখ লাখ মানুষ। অনলাইনে শিক্ষাদান ও কাজের নতুন পদ্ধতি চালু হলেও তা ছিল অনেকের কাছে কঠিন।
অতিমারি শুধু দেহ নয়, মানুষের মন ও মানসিক স্বাস্থ্যকেও বিপর্যস্ত করেছে। দীর্ঘদিন ঘরবন্দী থাকার ফলে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, হতাশা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে শিশুরা ও বৃদ্ধরা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সামাজিক দূরত্ব, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন থেকে বিচ্ছিন্নতা মানুষকে করে তোলে একা ও অসহায়।
তবে অতিমারির কিছু ইতিবাচক দিকও লক্ষণীয়। এই সময়ে অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন, ঘরোয়া জীবনের মূল্য বুঝেছেন, পরিবারকে সময় দেওয়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন। মানুষ বুঝেছে, প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় না রাখলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হতে পারে।
এই অতিমারি মানব সমাজকে শিক্ষা দিয়েছে—মানুষ যতই উন্নত হোক না কেন, প্রকৃতির কাছে সে কতটা অসহায়। তাই ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং মানবিক সচেতনতা।
অতিমারি আমাদের শিখিয়েছে সহমর্মিতা, সংহতি ও একসঙ্গে লড়াই করার মন্ত্র। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে একটি সুস্থ, মানবিক ও সহনশীল সমাজ গঠনের পথে।
১১.৩ তোমার ভালোলাগা মন্দলাগা।
উত্তর:
আমার ভালোলাগা ও মন্দলাগা
মানুষের মনে নানা রকম অনুভূতি থাকে—কিছু ভালো লাগে, কিছু মন্দ লাগে। আমাদের চারপাশের পরিবেশ, মানুষজন, ঘটনার প্রতি আমাদের নিজের কিছু ভাবনা ও প্রতিক্রিয়া থাকে। এগুলিই আমাদের ভালোলাগা ও মন্দলাগা তৈরি করে। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। আমার প্রতিদিনের জীবনে নানা বিষয় আমাকে আনন্দ দেয়, আবার কিছু বিষয় মন খারাপ করে তোলে।
আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে প্রকৃতির মাঝে থাকতে। আকাশে যখন সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়, পাখিরা ডাকাডাকি করে, গাছপালা যখন সবুজে ভরে ওঠে—তখন মনটা বেশ আনন্দে ভরে যায়। বৃষ্টির দিনেও খুব ভালো লাগে। টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে বই পড়তে আমার দারুণ লাগে। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে কোথাও বেড়াতে যাওয়াও আমার অনেক পছন্দের। বিশেষ করে সমুদ্র অথবা পাহাড়ে গেলে মনটা আরও ফুরফুরে হয়ে ওঠে।
আমার প্রিয় খাবার খাওয়া, ভালো বই পড়া, সুন্দর ছবি আঁকা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো—সবই আমার ভালোলাগার অংশ। স্কুলে কোনো প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারলে কিংবা পরীক্ষায় ভালো ফল করলে যে আনন্দ পাই, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
তবে সবকিছুই শুধু ভালোলাগা দিয়ে ভরা নয়। কিছু কিছু বিষয় সত্যিই মন খারাপ করে তোলে। যেমন, রাস্তায় ছোট ছোট শিশুরা যখন ভিক্ষা করে, তখন খুব কষ্ট হয়। তারা যদি শিক্ষা ও সুন্দর জীবনের সুযোগ পেত, তাহলে দেশ ও নিজের জীবন দুটোই ভালো হতো। আবার কেউ যখন গরিব মানুষদের নিয়ে হাসাহাসি করে বা পশু-পাখিদের কষ্ট দেয়, তখন খুব খারাপ লাগে।
বন্ধুদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, শিক্ষকদের প্রতি অসম্মানজনক আচরণ, পরিবেশ দূষণ, ট্রাফিক জ্যাম ও শব্দদূষণ—সবই আমার মন্দলাগার মধ্যে পড়ে। এমনকি অতিরিক্ত মোবাইল বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে যখন অনেকে বাস্তব জীবন ভুলে যায়, সেটাও আমার একেবারেই ভালো লাগে না।
শেষ কথা হলো, ভালোলাগা ও মন্দলাগা—এই দুই মিলে আমাদের জীবন। যেগুলো ভালো লাগে, সেগুলো আরও বাড়ানো উচিত, আর যেগুলো মন্দ লাগে, সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা দরকার। তবেই আমাদের জীবন আরও সুন্দর ও অর্থবহ হবে।
১১.৪ কবি শঙ্খ ঘোষ এক জাগ্রত দীপশিখা।
উত্তর:
কবি শঙ্খ ঘোষ — এক জাগ্রত দীপশিখার প্রতীক
বাংলা সাহিত্যের আকাশে কবি শঙ্খ ঘোষ এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, এক জাগ্রত দীপশিখা। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ ও চিন্তাভাবনা শুধু সাহিত্যের গন্ডিতেই সীমাবদ্ধ নয়, তা সমাজ, সংস্কৃতি এবং মানবিক মূল্যবোধের প্রতিও এক দৃঢ় দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে। শঙ্খ ঘোষ শুধু একজন কবি নন, তিনি ছিলেন এক অসাম্প্রদায়িক, প্রজ্ঞাবান ও বিবেকবান মনীষী, যিনি নিজের কলমকে সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার করে তুলেছিলেন।
শঙ্খ ঘোষের কবিতায় মানুষের যন্ত্রণা, প্রতিবাদ, প্রেম, দ্রোহ ও আশার মিশেল দেখা যায়। তাঁর লেখায় কখনও গভীর জীবনবোধ, কখনও প্রতিবাদের ধ্বনি, আবার কখনও নিসর্গ ও মানুষের আন্তরিক অনুভব প্রতিফলিত হয়েছে। “দিনগুলি রাতগুলি”, “বাবরের প্রার্থনা”, “মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে”, “ঈশ্বরের জন্ম” প্রভৃতি কবিতা তাকে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম উচ্চতায় স্থান দিয়েছে। তাঁর ভাষা কখনও সূক্ষ্ম, কখনও প্রতিবাদী, কিন্তু সব সময় গভীরভাবে চিন্তাশীল।
শঙ্খ ঘোষ ছিলেন রবীন্দ্রভাবনায় গভীরভাবে প্রভাবিত, কিন্তু তিনি কখনও অনুকরণ করেননি। বরং রবীন্দ্রনাথের মতোই মানবিকতা, সাম্য এবং ন্যায়ের পক্ষে নিজের স্বর বজায় রেখেছেন। শিক্ষাবিদ হিসেবেও তিনি ছিলেন অগ্রগণ্য। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি ভারতের নানা গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান করেছেন।
তিনি শুধু সাহিত্যচর্চায় নয়, সমাজের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধও বরাবরই স্পষ্ট ছিল। রাজনীতি বা প্রশাসনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন নির্ভীক, নীতিনিষ্ঠ ও সুস্পষ্ট কণ্ঠস্বর। একজন কবি হিসেবে তিনি বুঝতেন—মৌনতা কখনও কখনও অপরাধ। তাই নানা সামাজিক সংকটে তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, যা তাকে এক “জাগ্রত দীপশিখা” হিসেবে প্রতিস্থাপন করেছে।
২০২১ সালে তাঁর প্রয়াণে বাংলা সাহিত্য এক অমূল্য ধন হারায়। তবে তাঁর লেখা, তাঁর চিন্তাভাবনা, তাঁর নৈতিক অবস্থান আজও আমাদের পথ দেখায়। নতুন প্রজন্ম তাঁর রচনার মাধ্যমে সাহিত্যের গভীরতা ও সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে অবহিত হতে পারে।
শেষ কথায় বলা যায়, কবি শঙ্খ ঘোষ শুধু একজন সাহিত্যিক নন—তিনি ছিলেন সময়ের বিবেক, মানবতার প্রতীক ও আলোর দিশারি; এক সত্যিকারের জাগ্রত দীপশিখা।
MadhyamikQuestionPapers.com এ আপনি অন্যান্য বছরের প্রশ্নপত্রের ও Model Question Paper-এর উত্তরও সহজেই পেয়ে যাবেন। আপনার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ কেমন লাগলো, তা আমাদের কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আরও পড়ার জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য MadhyamikQuestionPapers.com এর সাথে যুক্ত থাকুন।