Madhyamik Question Papers

বাংলা Model Question Paper 17 (2026) এর উত্তর – Class 10 WBBSE

Bengali
Bengali Model Question Paper 17 2026 Answer Thumbnail

আপনি কি ২০২৬ সালের মাধ্যমিক Model Question Paper 17 এর সমাধান খুঁজছেন? তাহলে আপনি একদম সঠিক জায়গায় এসেছেন। এই আর্টিকেলে আমরা WBBSE-এর বাংলা ২০২৬ মাধ্যমিক Model Question Paper 17-এর প্রতিটি প্রশ্নের সঠিক ও বিস্তৃত সমাধান উপস্থাপন করেছি।

প্রশ্নোত্তরগুলো ধারাবাহিকভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা সহজেই পড়ে বুঝতে পারে এবং পরীক্ষার প্রস্তুতিতে ব্যবহার করতে পারে। বাংলা মডেল প্রশ্নপত্র ও তার সমাধান মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান ও সহায়ক।

MadhyamikQuestionPapers.com, ২০১৭ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষার সমস্ত প্রশ্নপত্র ও সমাধান সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করে আসছে। ২০২৬ সালের সমস্ত মডেল প্রশ্নপত্র ও তার সঠিক সমাধান এখানে সবার আগে আপডেট করা হয়েছে।

আপনার প্রস্তুতিকে আরও শক্তিশালী করতে এখনই পুরো প্রশ্নপত্র ও উত্তর দেখে নিন!

Download 2017 to 2024 All Subject’s Madhyamik Question Papers

View All Answers of Last Year Madhyamik Question Papers

যদি দ্রুত প্রশ্ন ও উত্তর খুঁজতে চান, তাহলে নিচের Table of Contents এর পাশে থাকা [!!!] চিহ্নে ক্লিক করুন। এই পেজে থাকা সমস্ত প্রশ্নের উত্তর Table of Contents-এ ধারাবাহিকভাবে সাজানো আছে। যে প্রশ্নে ক্লিক করবেন, সরাসরি তার উত্তরে পৌঁছে যাবেন।

Table of Contents

১। সঠিক উত্তরটি নির্বাচন করো:

১.১ ‘তারপর ধমক খায়,’ তপন ধমক খায় 

(ক) গল্প লেখার জন্য, 
(খ) নিজের লেখা গল্প না পড়ার জন্য, 
(গ) ছোটোমাসির অবাধ্য হওয়ার জন্য, 
(ঘ) লেখাপড়ায় মনোযোগ না দেওয়ার জন্য

উত্তর: (খ) নিজের লেখা গল্প না পড়ার জন্য

১.২ জগদীশবাবুর সম্পত্তির মূল্য ছিল-

(ক) দশ লক্ষ টাকা, 
(খ) এগারো লক্ষ টাকা, 
(গ) বারো লক্ষ টাকা, 
(ঘ) তেরো লক্ষ টাকা

উত্তর: (খ) এগারো লক্ষ টাকা

১.৩ ইসাবের বাবা জাতিতে ছিলেন 

(ক) রাজপুত, 
(খ) শিখ, 
(গ) পাঠান, 
(ঘ) জাঠ

উত্তর: (গ) পাঠান

১.৪ ‘অসুখী একজন’ কবিতার কথক ঘুমিয়েছিলেন-

(ক) বারান্দায়
(খ) মেঝেতে,
(গ) ঝুলন্ত বিছানায়, 
(ঘ) ঘাস জন্মানো রাস্তায়

উত্তর: (গ) ঝুলন্ত বিছানায়

১.৫ আফ্রিকার ক্রন্দন কীরূপ? 

(ক) উগ্র, 
(খ) ভাষাহীন, 
(গ) আবেগবিহ্বল,
(ঘ) নিনাদহীন

উত্তর: (খ) ভাষাহীন

১.৬ “উড়িছে কৌশিক-ধ্বজ;”- ‘কৌশিক-বজ’ কথাটির অর্থ হল 

(ক) সাদা রঙের পতাকা, 
(খ) চক্র চিহ্নিত পতাকা, 
(গ) রেশমি কাপড়ের পাতাকা, 
(ঘ) সাধারণ পতাকা

উত্তর: (গ) রেশমি কাপড়ের পাতাকা

১.৭ নিজের হাতের কলমের আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল যে লেখকের, তাঁর নাম-

(ক) বনফুল, 
(খ) পরশুরাম, 
(গ) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়, 
(ঘ) শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়

উত্তর: (গ) ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়

১.৮ এখন পালকের কলম দেখতে পাওয়া যায়-

(ক) বনেদি বাড়িতে, 
(খ) পুরনো দিনের তৈলচিত্রে, 
(গ) সরস্বতী পুজোয়, 
(ঘ) সরকারি অফিসে

উত্তর: (খ) পুরনো দিনের তৈলচিত্রে

১.৯ ‘অরণ্যে রোদন’ কথাটির অর্থ-

(ক) নিষ্ফল ক্রন্দন, 
(খ) ভূমিকা, 
(গ) সংকীর্ণমনা, 
(ঘ) দীর্ঘসূত্রিতা

উত্তর: (ক) নিষ্ফল ক্রন্দন

১.১০ অন্যের পরিচালনায় যে কর্তা কাজ করে, তাকে বলে-

(ক) প্রযোজক কর্তা, 
(খ) প্রযোজ্য কর্তা, 
(গ) সহযোগী কর্তা, 
(ঘ) উহ্য কর্তা

উত্তর: (খ) প্রযোজ্য কর্তা

১.১১ এখন ভরপেট খেয়ে খেলতে যাব না। বাক্যটিতে কর্তা হল।

(ক) প্রযোজ্য কর্তা, 
(খ) অনুক্ত কর্তা, 
(গ) উহ্য কর্তা, 
(ঘ) সহযোগী কর্তা

উত্তর: (গ) উহ্য কর্তা

১.১২ ‘রামদাস আর কোনো প্রশ্ন করিল না।’ নিম্নরেখ পদটি যে সমাসের উদাহরণ সেটি হল-

(ক) তৎপুরুষ, 
(খ) অব্যয়ীভাব, 
(গ) কর্মধারয়,
(ঘ) দ্বিগু

উত্তর: (ক) তৎপুরুষ

১.১৩ উপমিত কর্মধারয় সমাসের ব্যাসবাক্যে কী থাকে না?-

(ক) উপমেয়, 
(খ) সাদৃশ্যবাচক শব্দ, 
(গ) উপমান, 
(ঘ) সাধারণ ধর্মবাচক পদ

উত্তর: (ঘ) সাধারণ ধর্মবাচক পদ

১.১৪ সরল বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়ার সংখ্যা-

(ক) একাধিক, 
(খ) একটি, 
(গ) দুটি, 
(ঘ) এদের কোনোটিই নয়

উত্তর: (খ) একটি

১.১৫ “তোরা সব জয়ধ্বনি কর।” এটা কী জাতীয় বাক্য?

(ক) নির্দেশক বাক্য, 
(খ) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য, 
(গ) আবেগসূচক বাক্য,
(ঘ) প্রার্থনাসূচক বাক্য।

উত্তর: (খ) অনুজ্ঞাসূচক বাক্য

১.১৬ ‘আজ কি তোমার বাজারে যাওয়া হয়নি?’ ‘আজ কি তুমি বাজারে যাওনি?’ এই বাচ্য পরিবর্তনটি হল 

(ক) ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তনের উদাহরণ
(খ) ভাববাচ্য থেকে কর্মবাচ্যে পরিবর্তনের উদাহরণ, 
(গ) ভাববাচ্য থেকে কর্মকর্তৃবাচ্যে পরিবর্তনের উদাহরণ, 
(ঘ) কর্মবাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তনের উদাহরণ।

উত্তর: (ক) ভাববাচ্য থেকে কর্তৃবাচ্যে পরিবর্তনের উদাহরণ

১.১৭ যে বাচ্যে কর্ম কর্তার মতো কাজ করে, সেটি হল 

(ক) কর্তৃবাচ্য, 
(খ) কর্মবাচ্য, 
(গ) ভাববাচ্য, 
(ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য।

উত্তর: (ঘ) কর্মকর্তৃবাচ্য

২। কমবেশি ২০টি শব্দে নীচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও:

২.১ যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

২.১.১ “আর কখনো শুনতে না হয়” কাকে, কী শুনতে না হয়?

উত্তর: আর কখনো শুনতে না হয়”  তপনকে আর কখনো শুনতে না হয় যে, “অমুক তপনের লেখা ছাপিয়ে দিয়েছে”।

২.১.২ ‘হতেই পারে না।’ বক্তা কী হতে পারে না বলে বুঝিয়েছেন?

উত্তর: প্রদর্শিত অংশ থেকে বোঝা যায়, “হতেই পারে না” বলতে ভবতোষ এবং অনাদি এই ব্যক্তিটি যে হরিদা নয়, সেটাই বুঝিয়েছেন। তাদের মতে, এই আগন্তুকের ভাষা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং উপস্থিতি হরিদার চরিত্রের সাথে মেলে না। বিশেষ করে তার “পরম সুখ হলো সব বন্ধন থেকে মুক্তি” – এই ধরনের আধ্যাত্মিক ও বৈরাগ্যময় বাক্য হরিদার মুখের বলা সম্ভব নয় বলে তারা মনে করে।

২.১.৩ ‘রামদাস কহিল, তাহলে আপনাকেই হয়তো আর একদিন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে।” কোন্ ঘটনার প্রায়শ্চিত্ত উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে করতে হতে পারে বলে বক্তার অভিমত?

উত্তর: পুলিশের কর্তা, যিনি দেশের টাকায় একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে “বুনো হাঁস” শিকারের মতো তাড়া করছেন, তিনি অপূর্বর বাবার সহায়তায় সেই চাকরি পেয়েছেন। রামদাসের মতে, এই অন্যায় কাজের দায়ভার ভবিষ্যতে অপূর্বকেই প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ বহন করতে হতে পারে, কারণ তার পরিবার এই পুলিশ কর্তার চাকরি করতে সহায়তা করেছিল।

২.১.৪ “মা ওকে অনেক বুঝিয়েছিল,” মা কাকে, কী বুঝিয়েছিল?

উত্তর: মা অমৃতকে বুঝিয়েছিলেন যে, ইসাবের জামা ছেঁড়ার কারণ হলো ক্ষেতে কাজ করা, কিন্তু অমৃতের জামা প্রায় নতুনই রয়েছে। তাই অমৃতের ইসাবের মতো নতুন জামা কেনার কোনো প্রয়োজন নেই।

২.১.৫ ‘হঠাৎ তাহার মনে হইয়াছে,’ বক্তার কোন কথা মনে হয়েছে?

উত্তর: নদেরচাঁদের মনে হয়েছে যে, “রোষে ক্ষোভে উন্মত্ত এই নদীর আর্তনাদি জলরাশির কয়েক হাত উঁচুতে এমন নিশ্চিন্তমনে এতক্ষণ বসিয়া থাকা তাহার উচিত হয় নাই।”

২.২ যে-কোনো চারটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

২.২.১ ‘অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়’ কে, কাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন?

উত্তর: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রেমিকাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন।

২.২.২ “হা ধিক্ মোরে।” বক্তা  নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছেন কেন?

উত্তর: শত্রু বাহিনী যখন লঙ্কা অবরোধ করেছে, তখন তিনি নারীদের সাথে প্রমোদ উদ্যানে আমোদ-প্রমোদে মগ্ন এই চিন্তা করে ইন্দ্রজিৎ নিজেকেই ধিক্কার করেছিলেন।

২.২.৩ ‘জয় প্রলয়ঙ্কর!’ প্রলয়ঙ্কার কে?

উত্তর: ‘জয় প্রলয়ঙ্কর!’ প্রলয়ঙ্কর বলতে মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে।

২.২.৪ “সিন্ধুতীরে দেখি দিব্যস্থান।” ‘দিব্যস্থান’ কেমন ছিল?

উত্তর: এটি ছিল অতি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন একটি স্থান। সেখানকার মানুষের জীবনে কোনো ধরনের দুঃখ, কষ্ট বা অভাব-অনটন ছিল না। সমাজে নৈতিক আদর্শ ছিল অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের। মানুষ সত্য ধর্ম পালন করত এবং সর্বদা সদাচারে নিযুক্ত থাকত। “সত্য ধর্ম সদা সদাচার” – এই বাক্যাংশ দ্বারা বোঝায় যে, সেখানকার মানুষ ছিল ধার্মিক, সত্যনিষ্ঠ এবং তাদের আচার-আচরণ ছিল সদাসর্বদা সৎ ও ন্যায়নিষ্ঠ।

২.২.৫ অস্ত্র ধরার পরিবর্তে কবি জয় গোস্বামী কী নিতে বলেছেন?

উত্তর: অস্ত্রহাতে নয়, গানের সম্মোহনী শক্তিকেই সঙ্গী করে জীবনপথে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন কবি জয় গোস্বামী।

২.৩ যে-কোনো তিনটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

২.৩.১ দোকানদার লেখককে কলম বিক্রি করার আগে কী জাদু দেখিয়েছিলেন?

উত্তর: লেখক যখন কলমটি দেখতে চাইলেন, দোকানদার সেটি বিক্রি করার আগে এক অপূর্ব জাদু দেখিয়েছিলেন। তিনি কলমের মুখ থেকে খাপটি খুলে সেটি ছুড়ে মারলেন টেবিলের পাশে রাখা একটি কাঠের বোর্ডের দিকে। আশ্চর্যের বিষয়, এর পরেও কলমের নিবটি সম্পূর্ণ অক্ষত রয়ে গেল।

২.৩.২ কালিকে দীর্ঘস্থায়ী করার পদ্ধতি কী ছিল?

উত্তর: কালিকে দীর্ঘস্থায়ী করার পদ্ধতি:  কাঠের উনুনে রান্নার সময় কড়াইয়ের তলায় জমা কালি সংগ্রহ করা হতো। লাউপাতা দিয়ে উনুনের কালি ঘষে তুলে নেওয়া হতো। সংগ্রহ করা কালি একটি পাথরের বাটিতে রাখা জলে ভালো করে গুলে নেওয়া হতো। ওস্তাদরা এই কালো জলে হরতকী ঘষতেন। কখনও কখনও আতপ চাল ভেজে পুড়িয়ে তার গুঁড়া মিশানো হতো। সবকিছু ভালো করে মেশানোর পর, একটি খুন্তির গোড়া পুড়িয়ে লাল টকটকে করে সেই কালির মিশ্রণে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। এতে মিশ্রণটি অনেক সময় টগবগ করে ফুটত। শেষে এই মিশ্রণটি একটি ন্যাকড়া দিয়ে ছেঁকে মাটির দোয়াতে সংরক্ষণ করা হতো। এই ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি কালিই ছিল দীর্ঘস্থায়ী।

২.৩.৩ “তাদের কাছে উক্ত প্রতিজ্ঞাবাক্যটি সুশ্রাব্য ঠেকবে না,” ‘তাদের’ বলতে কাদের বলা হয়েছে?

উত্তর: ইংরেজি মাধ্যমে জ্যামিতি চর্চা করা শিক্ষার্থীদের কাছে ব্রহ্মমোহন মল্লিকের বইয়ের ভাষা কঠিন মনে হবে।

২.৩.৪ “আমাদের আলংকারিকগণ শব্দের ত্রিবিধ কথা বলেছেন” কোন্ ‘ত্রিবিধ কথা’র প্রসঙ্গ লেখক স্মরণ করেছেন?

উত্তর: প্রদর্শিত অংশে লেখক শব্দের অভিধা, লক্ষণা ও ব্যঞ্জনা এই ত্রিবিধ কথার প্রসঙ্গ স্মরণ করেছেন।

২.৪ যে-কোনো আটটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

২.৪.১ ‘অস্ত্র রাখো‘- নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি নির্ণয় করো।

উত্তর: ‘অস্ত্র রাখো’- নিম্নরেখ পদটির কারক ও বিভক্তি হল কর্মকারকে ‘শূন্য’ বিভক্তি।

২.৪.২ অধিকরণে বীপ্সা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: কোনো কাজের পুনরাবৃত্তি বা ব্যাপকতা বোঝালে অধিকরণ কারককে ‘বীপ্সা অধিকরণ’ বলা হয়। উদাহরণ, ‘ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’

২.৪.৩ একটি বাক্য লিখে সমধাতুজ কর্মের প্রয়োগ দেখাও।

উত্তর: বাক্য: সে হাসি হাসে।

ব্যাখ্যা: এখানে ‘হাসি’ কর্ম এবং ‘হাসে’ ক্রিয়া—উভয়ই ‘হাস’ ধাতু থেকে গঠিত। তাই এটি সমধাতুজ কর্মের উদাহরণ।

২.৪.৪ সমাসবদ্ধ পদ বলতে কী বোঝো?

উত্তর: সমাসবদ্ধ পদ বলতে বোঝায় দুই বা ততোধিক পদ মিলে গঠিত একটি নতুন ও অর্থপূর্ণ সংক্ষিপ্ত পদকে।

২.৪.৫ অব্যয়ীভাব সমাসের একটি উদাহরণ দাও।

উত্তর: “অব্যয়ীভাব সমাস” এর একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো – উপদেশ । 

২.৪.৬ ‘কালসর্প’ শব্দের ব্যাসবাক্যসহ সমাসের নাম লেখো।

উত্তর: কর্মধারয় সমাস

 ব্যাসবাক্য: কালরূপ সর্প / যে সর্প কালসম
সমাসের নাম: 

২.৪.৭ সে তখন যেতে পারবে না হ্যাঁ-বাচক বাক্যে পরিবর্তন করো।

উত্তর: ‘সে তখন যেতে পারবে না’ বাক্যটিকে হ্যাঁ-বাচক বাক্যে পরিবর্তন করলে হবে- সে তখন যেতে পারবে।

২.৪.৮ বাক্য নির্মাণের শর্তগুলি উল্লেখ করো।

উত্তর: বাক্য গঠনের মূল তিনটি শর্ত আমরা পেয়ে থাকি এইগুলি হল – আসত্তি, যোগ্যতা ও আকাঙ্ক্ষা।

২.৪.৯ কোথায় থাকেন? ভাববাচ্যে পরিবর্তন করো।

উত্তর: “কোথায় থাকেন?” বাক্যটির ভাববাচ্যে পরিবর্তন করলে হবে – কোথায় থাকা হয়?

২.৪.১০ বাচ্য কয় প্রকার ও কী কী?

উত্তর: বাচ্য তিন প্রকার। যথা – কর্তৃবাচ্য, কর্মবাচ্য, ভাববাচ্য।

৩। প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কমবেশি ৬০ শব্দে উত্তর দাও:

৩.১ যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

৩.১.১ “হরিদার একথার সঙ্গে তর্ক চলে না।” কথাটি কী? তর্ক চলে না কেন লেখো।

উত্তর: “হরিদার একথার সঙ্গে তর্ক চলে না।” কথাটি বলার কারণ হলো, হরিদা যে জীবনবোধ ও নীতির কথা বলেছেন, তা এতটাই মৌলিক, সরল ও আত্মস্থীকৃত যে, তার সঙ্গে তর্ক করার বা যুক্তি দেখানোর কোনো অবকাশ নেই।

তর্ক না চলার কারণ – হরিদা ‘বিরাগী সন্ন্যাসী’র ভূমিকায় শুধু বাহ্যিক রূপই ধারণ করেননি, তিনি সেই ভূমিকার আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ ও নীতিকেও সম্পূর্ণরূপে আত্মস্থ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, “শত হোক, একজন বিরাগী সন্ন্যাসী হয়ে টাকা-ফাকা কী করে স্পর্শ করি বল? তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায়।” অর্থাৎ, তিনি শুধু অভিনয় নয়, চরিত্রের ‘সততা’ রক্ষা করতে চেয়েছেন। এই সততার দাবি অকাট্য। হরিদার বক্তব্য তার জীবনযাপনের সঙ্গেও সঙ্গতিপূর্ণ। লেখকই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, “হরিদার জীবনের ভাতের হাঁড়ি মাঝে মাঝে শুধু জল ফুটিয়েই সারা হবে।” অর্থাৎ, তিনি টাকার মোহ ত্যাগ করে যে দারিদ্র্যকে বেছে নিয়েছেন, তা কোনো ভান নয়; এটি তার জীবনেরই অংশ। তাই টাকা না নেওয়ার পেছনের এই জীবনবোধের সঙ্গে তর্ক করা অর্থহীন। হরিদা তার অভিনয় ও বাস্তব জীবনের মধ্যে একটি নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সাযুজ্য রক্ষা করেছেন। তার এই অবস্থান এতটাই স্বচ্ছ ও দৃঢ় যে, সেখানে তর্কের কোনো স্থান নেই। এজন্যই লেখক বলেছেন, “হরিদার একথার সঙ্গে তর্ক চলে না।

৩.১.২ “নদীর জন্য এমনভাবে পাগল হওয়া কি তার সাজে?” কার কথা বলা হয়েছে? কেন এমন কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: নদীর জন্য এমনভাবে পাগল হওয়া কি তার সাজে?” – এখানে নদেরচাঁদ এর কথা বলা হয়েছে।

এমন কথা বলার কারণ – নদেরচাঁদ একজন স্টেশন মাস্টার দায়িত্বপূর্ণ চাকরি, যেখানে তাকে ট্রেন চলাচলের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। এমন পেশায় থাকা সত্ত্বেও সে নদীর জন্য অস্বাভাবিক মমতা ও আবেগ দেখায়, যা তার বয়স ও পদমর্যাদার সঙ্গে খাপ খায় না বলে লেখক প্রশ্ন তুলেছেন। নদেরচাঁদের এই “পাগলামি”কে সমাজ বা বাস্তবতার দৃষ্টিতে অযৌক্তিক মনে হলেও, তার নিজের কাছে এটি যুক্তিসঙ্গত; কারণ নদীর সাথেই তার শৈশব ও স্মৃতি জড়িত।

৩.২ যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

৩.২.১ “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম” কে, কাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন?

উত্তর: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমা মানুষটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

৩.২.২ “কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে” কার সম্পর্কে এমন উক্তি করা হয়েছে? এমন উক্তির কারণ কী?

উত্তর: কাল-ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে” – এই উক্তিটি মহাকাল বা শিব সম্পর্কে করা হয়েছে।

এমন উক্তির কারণ – কাল-ভয়ংকর হলেন প্রলয়নৃত্যের পাগল শিব, যিনি ধ্বংসের দেবতা। তিনি কালবৈশাখী ঝড়ের মতো ভয়ঙ্কর রূপে আবির্ভূত হন, তাঁর হাতে বজ্রশিখার মশাল। রক্তমাখা কৃপাণ হাতে তিনি সমস্ত অশুভ শক্তি, অসুন্দর ও জীর্ণতাকে ধ্বংস করেন। তাঁর ধ্বংসই নতুন সৃষ্টির পথ প্রশস্ত করে জীর্ণ সমাজব্যবস্থা ভেঙে তিনি সুন্দর ও নতুন সমাজের প্রতিষ্ঠা করেন। কবি বিশ্বাস করেন যে শিবের এই প্রলয়ংকর রূপই মানবতার অন্ধকার, দাসত্ব ও মূল্যবোধের অবক্ষয় দূর করে নতুন সূর্যোদয় এনেদেবে।

৪। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

৪.১ ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর স্বদেশপ্রেমের যে পরিচয় লিপিবদ্ধ হয়েছে, তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর: “পথের দাবী” রচনাংশে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অপূর্বর চরিত্রের মধ্য দিয়ে এক গভীর ও আন্তরিক স্বদেশপ্রেমের ছবি এঁকেছেন। স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি অপূর্বর অনুরাগই তার স্বদেশপ্রেমের ভিত্তি। থানায় গিয়ে যখন সে দেখে পুলিশ গিরীশ মহাপাত্রকে সব্যসাচী সন্দেহে খানাতল্লাশি করছে, তখন ‘সব্যসাচী’ নাম শুনেই তার মন অস্থির হয়ে ওঠে। দেশহিতৈষী এই মানুষটিকে রক্ষা করতে সে স্পষ্টভাবেই পুলিশকে অনুরোধ করে – “কাকাবাবু, এ লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন, যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।” আবার নিমাইবাবুর কার্যকলাপের জন্য তার অন্তর লজ্জায় ভরে ওঠে, কারণ তিনিই তার আত্মীয় ও পিতার বন্ধু। অপূর্বর দেশপ্রেমের সবচেয়ে স্পষ্ট ও শক্তিশালী প্রকাশ ঘটে রামদাসের সাথে তার কথোপকথনে। সব্যসাচীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা থেকে সে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে ওঠে – “যাঁকে তিনি দেশের টাকায়, দেশের লোক দিয়ে শিকারের মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছেন তিনি ঢের বেশি আমার আপনার।” এই উক্তিতে ফুটে ওঠে তার কাছে দেশের মানুষই যে প্রকৃত আপন। অপূর্ব আবেগপ্রবণ চরিত্র। নিজের বিপদের কথা চিন্তা না করেই সে যখন মনের গভীর বেদনা ও ক্ষোভ চাপতে পারে না, তখনই তার স্বদেশপ্রেমের অকৃত্রিমতা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। রাজরোষের ভয় তাকে তার দেশপ্রেম থেকে বিচ্যুত করতে পারে না।

৪.২ ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প অবলম্বনে তপন চরিত্রটির পরিচয় দাও।

উত্তর: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপন। গল্পে তার চরিত্রের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে। লেখকদের সম্পর্কে তপনের মনে ছিল গভীর বিস্ময়। সে মনে করত, লেখকরা যেন অন্য কোনো জগতের মানুষ; সাধারণ মানুষের সাথে তাদের কোনো মিল নেই। কিন্তু ছোটোমাসির বিয়ের পর তার এই ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যায়। কারণ, তার নতুন মেসো নিজেই ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক, যার অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছে। একজন লেখককে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়ে তপনও অনুপ্রাণিত হয় এবং একটি গল্প লিখে ফেলে। তার নতুন মেসো গল্পটির প্রশংসা করলে তপন লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। পরবর্তীতে, ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তার গল্পটি প্রকাশিত হলে তপন বিস্মিত হয়ে যায়। কিন্তু এই বিস্ময় আনন্দের বদলে হতাশায় পরিণত হয় যখন সে দেখে যে, মেসো গল্পটি সংশোধন করতে গিয়ে মৌলিক রচনাটিকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিয়েছেন। তপন নিজের লেখায় নিজেকেই খুঁজে পায় না। এই পরিবর্তন সে মেনে নিতে পারে না। এর ফলে তপন গভীরভাবে হতাশ হয়। তবে এই হতাশা থেকেই সে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সে সংকল্প করে যে, ভবিষ্যতে তার লেখা সে নিজেই পত্রিকা অফিসে জমা দেবে, সেটি প্রকাশিত হোক আর নাই হোক। এই আত্মসম্মানবোধ ও স্বাধীনচেতা মনোভাবই তপনকে একজন দৃঢ়সংকল্প ব্যক্তিতে পরিণত করে। এইভাবে তপনের চরিত্রটি  আত্মসম্মানবোধ ও স্বাধীনচেতা মনোভাবই ফুটে ওঠ। 

৫। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

৫.১ “আমাদের শিশুদের শব / ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে।” ‘শিশুদের শব’ ছড়িয়ে রয়েছে কেন? শিশুদের শব দেখে কবির মনের প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?

উত্তর: “আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি” কবিতায় যুদ্ধ ও ধ্বংসের সেই নিষ্ঠুর বাস্তবতাই ‘শিশুদের শব’ ছড়িয়ে থাকার কারণ।

শিশুদের শব দেখে কবির মনের প্রতিক্রিয়া – কবি দেখেছেন যে সমাজের চারপাশে ধ্বংসের আয়োজন, ডানপাশে ধস আর বাঁয়ে গিরিখাদ, মাথায় বোমারু বিমানের আনাগোনা – এই যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিতেই শিশুরা মারা পড়ছে এবং তাদের মৃতদেহ কাছে-দূরে ছড়িয়ে রয়েছে। কবির মনের প্রতিক্রিয়া ছিল গভীর মর্মবেদনা, যুদ্ধবিরোধী চেতনা ও মানবিক বিপন্নবোধে আক্রান্ত। শিশুদের শব দেখে কবি বুঝতে পারেন যে এই মৃত্যু কেবল একটি প্রাণের অবসানই নয়, বরং ভবিষ্যতের সভ্যতার সমাপ্তির ইঙ্গিত। তিনি অনুভব করেন যে শিশুদের এই মৃত্যু সমগ্র মানবতার জন্য একটি হুমকিস্বরূপ, যা সাধারণ মানুষকেও আতঙ্কিত করে তোলে – “আমরাও তবে এইভাবে/এ মুহূর্তে মরে যাব না কি?” এই চিন্তায় কবির মন বেদনায় ও শঙ্কায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।

৫.২ ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি অস্ত্র ফেলতে বলেছেন কেন? অস্ত্র পায়ে রাখার মর্মার্থ কী?

উত্তর: “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় কবি জয় গোস্বামী অস্ত্র ফেলতে বলেছেন মূলত যুদ্ধ, হিংসা ও ধ্বংসের বিরুদ্ধে মানবতা ও শান্তির জয়কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। কবির মতে, অস্ত্র হল হিংসা, রক্তপাত ও ধ্বংসের প্রতীক। অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান হল মানবতার গান, যা যুদ্ধবাজ শক্তির মুখে শান্তি ও প্রেমের বার্তা ছড়িয়ে দেয়। কবি বিশ্বাস করেন যে অস্ত্রের মাধ্যমে শান্তি অর্জন সম্ভব নয়। বরং গান (শিল্প, সংস্কৃতি, মানবিক বন্ধন) মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে তুলতে পারে। কবি গান্ধীবাদী অহিংসার আদর্শে বিশ্বাসী। অস্ত্র ফেলে দেওয়ার মাধ্যমে তিনি হিংসার বিরুদ্ধে অহিংস সংগ্রামের ডাক দিয়েছেন।

অস্ত্র পায়ে রাখার মর্মার্থ – অস্ত্র পায়ে রাখা হলো অস্ত্রকে পদদলিত করা। এটি অস্ত্রের প্রতি অবজ্ঞা ও অনাস্থার প্রতীক। পা মানে এগিয়ে চলা, অস্ত্রকে পায়ের তলায় রাখা মানে একটি শান্তিপূর্ণ ও অগ্রসরমান সমাজের দিকে যাত্রা, যেখানে অস্ত্রের কোনো স্থান নেই। এটি হিংসার বিরুদ্ধে শান্তির বিজয় এবং অস্ত্রের চেয়ে মানবিক মূল্যবোধকে ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়ার প্রতীক। কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান গেয়ে যুদ্ধ, হিংসা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শান্তি, মানবতা ও অহিংসার জয়কে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন।

৬। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

৬.১ ‘হারিয়ে যাওয়া কালি কলম’ প্রবন্ধে লেখক বাঁশের কঞ্চি কেটে কলম থেকে আধুনিক বল-পেন পর্যন্ত কলমের যে ধারাবাহিক ইতিহাস লিখেছেন, তা সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

উত্তর: “হারিয়ে যাওয়া কালি কলম” প্রবন্ধে শ্রীপান্থ দেশ-বিদেশে কলমের বিবর্তনের একটি চিত্র পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন। বিদেশের প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, প্রাচীন মিশরে নলখাগড়া ভেঙে ভোঁতা করে তুলি বানিয়ে লেখার প্রচলন ছিল। ফিনিশিয়ায় হাড়ের কলম ব্যবহার হতো, আর প্রাচীন রোমে ব্রোঞ্জের শলাকা দিয়ে তৈরি হত ‘স্টাইলাস’ নামক কলম। চীনারা লিখত তুলি দিয়ে। অন্যদিকে, আমাদের এখানে এক সময় বাঁশের কঞ্চি, খাগ ও পালকের কলমের প্রচলন ছিল। বাঁশের কঞ্চি কেটে তার মুখ চিরে কলম বানানো হত। এখন এসব কলমের ব্যবহার প্রায় বিলুপ্ত। খাগের কলম এখন কেবল সরস্বতী পুজোতেই চোখে পড়ে। ব্রিটিশ আমলে পালকের কলম বা ‘কুইল’-এর ব্যবহার ছিল। পরবর্তীতে লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যানের তৈরি ফাউন্টেন পেন। পরবর্তীতে ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কার বিপ্লব এনে দেয়। একবার লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যানের গিয়েছেন আর একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করতে । দলিল কিছুটা লেখা হওয়ার পর হঠাৎ কালির দোয়াত উপুড় হয়ে পড়ে গেল কাগজে । কালি পড়ে চুক্তিপত্রের কাগজ নষ্ট হয়ে যায় । কালির সন্ধানে তিনি বেরিয়ে যান , ফিরে এসে শোনেন একজন তৎপর ব্যবসায়ী সইসাবুদ সাঙ্গ করে চুক্তিপত্র পাকা করে ইতিমধ্যেই চলে গেছেন । বিমর্ষ ওয়াটারম্যান প্রতিজ্ঞা করেন , এর বিহিত তিনি করবেন । আর তিনি আবিষ্কার করে ফেলেন ফাউন্টেন পেন। 

পরবর্তীতে ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কার বিপ্লব এনে দেয়। লুইস অ্যাডসন ওয়াটারম্যানের তৈরি ফাউন্টেন পেন অন্যান্য কলমকে সরিয়ে দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পার্কার, শেফার্ড, সোয়ানের মতো নানা ব্র্যান্ডের ফাউন্টেন পেন বাজারে আসে। কিন্তু ফাউন্টেন পেনও কালক্রমে বলপেন বা ডটপেনের কাছে জায়গা ছেড়ে দেয়। আর আজকের যুগে সেই বলপেন বা ডটপেনও কম্পিউটারের আবির্ভাবে বিলুপ্তির পথে।

৬.২ ‘এই কথাটি সকল লেখকেরই মনে রাখা উচিত।’ কথাটি কী? লেখকদের কোন্ কোন্ ত্রুটির কথা প্রাবন্ধিক তুলে ধরেছেন?

উত্তর: প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে “এই কথাটি সকল লেখকেরই মনে রাখা উচিত” – কথাটি হল “বৈজ্ঞানিক প্রসঙ্গের ভাষা অত্যন্ত সরল ও স্পষ্ট হওয়া আবশ্যক”।

প্রাবন্ধিক বাংলায় বৈজ্ঞানিক সাহিত্য রচনায় লেখকদের যেসব ত্রুটির কথা তুলে ধরেছেন, সেগুলো নিম্নরূপ –

ভাষাগত জটিলতা ও অনুবাদনির্ভরতা – অনেক লেখক বৈজ্ঞানিক বিষয় ইংরেজিতে ভেবে তার আক্ষরিক অনুবাদ করেন, ফলে বাংলা রচনা আড়ষ্ট ও প্রকৃতিবিরুদ্ধ হয়। ইংরেজি বাক্য গঠন ও শব্দের অর্থব্যাপ্তি বাংলায় সরাসরি প্রয়োগের চেষ্টা করেন, যা বাংলা ভাষার স্বাভাবিক প্রবাহকে বিঘ্নিত করে।

পরিভাষা সংক্রান্ত ভ্রান্তি – অনেক লেখক ইংরেজি শব্দের সমতুল্য বাংলা পরিভাষা তৈরিতে অদ্ভুত ও উৎকট শব্দ ব্যবহার করেন। ইংরেজি শব্দের বিভিন্ন অর্থের জন্য একই বাংলা শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা থাকে, যা অর্থের স্পষ্টতাকে ক্ষুণ্ণ করে।

অলংকারের অতিরিক্ত প্রয়োগ – বৈজ্ঞানিক রচনায় লক্ষণা, ব্যঞ্জনা, উৎপ্রেক্ষা প্রভৃতি অলংকারের ব্যবহার অনাবশ্যক; এতে বক্তব্য অস্পষ্ট হয়। কাব্যিক উপমা বা রূপক ব্যবহার করে বৈজ্ঞানিক তথ্য উপস্থাপন করা অনুচিত।

পরিভাষা পরিহারের ভুল ধারণা – অনেক লেখক মনে করেন পরিভাষা বাদ দিলে রচনা সহজবোধ্য হয়, কিন্তু এটি ভ্রান্ত ধারণা। পরিভাষার উদ্দেশ্য ভাষাকে সংক্ষিপ্ত ও অর্থ সুনির্দিষ্ট করা; অহেতুক ব্যাখ্যা বা পরিবর্তন রচনাকে দুর্বোধ্য করে তোলে।

অপর্যাপ্ত জ্ঞান ও ভুল তথ্য প্রদান – অনেক লেখকের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অপর্যাপ্ত থাকায় তারা ভুল তথ্য বা ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করেন, যা সাধারণ পাঠকের জন্য ক্ষতিকর। সম্পাদকদের উচিত অপরিচিত লেখকের রচনা প্রকাশের আগে বিশেষজ্ঞ দ্বারা যাচাই করা। প্রাবন্ধিকের মতে, বাংলা বৈজ্ঞানিক সাহিত্যকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে লেখকদের উপরোক্ত ত্রুটিগুলো পরিহার করে সরল, স্পষ্ট ও প্রাঞ্জল ভাষায় রচনা করতে হবে।

৭। কমবেশি ১২৫ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

৭.১ “তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষা। জানি না, আজ কার রক্ত সে চায়। পলাশি, রাক্ষসী পলাশি!” পলাশি নামকরণের কারণ নির্দেশ করে, উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: পলাশি নামটি এসেছে পলাশ ফুল থেকে। ঐতিহাসিক পলাশীর প্রান্তর একসময় পলাশ গাছের অরণ্যে আবৃত ছিল এবং বসন্তকালে লাল পলাশ ফুলে ছেয়ে যেত। এই লাল ফুলের আচ্ছাদন যেন রক্তের মতো দেখাত, যা যুদ্ধের রক্তপাতেরই পূর্বাভাসবাহী বলে নাটকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ – পলাশ ফুলের লাল রং যুদ্ধ ও রক্তপাতের প্রতীক। পলাশির প্রান্তর যেন রক্ত পানের তৃষ্ণা নিয়ে অপেক্ষা করছে এটি আসন্ন যুদ্ধের ভয়াবহতার একটি শক্তিশালী রূপক। “জানি না, আজ কার রক্ত সে চায়” এই অংশটির মাধ্যমে নবাব সিরাজউদ্দৌলার মনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বুঝতে পারছেন যে যুদ্ধ আসন্ন, কিন্তু এর ফলাফল কার পক্ষে হবে তা অনিশ্চিত। পলাশির যুদ্ধ বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত করার প্রতীক। নবাবের এই সংলাপে সেই ঐতিহাসিক ট্র্যাজেডি ফুটে উঠেছে। পলাশিকে “রাক্ষসী” আখ্যা দেওয়ার মাধ্যমে এর ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক চরিত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংলাপটি নবাবের মানসিক দ্বন্দ্ব, হতাশা এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টির প্রকাশ। তিনি বুঝতে পারছেন যে শক্তি ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতিতে তিনি আটকা পড়েছেন, এবং পলাশি তার ভাগ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে। পলাশি নামকরণের পেছনে প্রকৃতির রূপান্তরকারী শক্তি কাজ করেছে পলাশ ফুলের লালিমা যুদ্ধের রক্তের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। উক্তিটি তাই কেবল একটি স্থানের নামের উৎসই নয়, বরং এটি বাংলার ইতিহাসের একটি নির্ণায়ক মুহূর্তের প্রতীকী অভিব্যক্তি, যেখানে ক্ষমতা, রক্তপাত ও ট্র্যাজেডি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

৭.২ ‘বাংলার মান, বাংলার মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়াসে আপনারা আপনাদের শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, সর্বরকমে আমাকে সাহায্য করুন।’- সিরাজ কাদের কাছে এই সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন? কেন তিনি এই সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছেন?

উত্তর: উদ্ধৃতিটি বিখ্যাত বাংলা নাটক ‘সিরাজদ্দৌলা’ থেকে নেওয়া হয়েছে। নাটকের এই অংশে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা মীর জাফর, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ ও রায়দুর্লভ-সহ তাঁর দরবারের প্রধান আমির-ওমরাহ, সেনাপতি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে এই সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।

তিনি এই সাহায্যের প্রত্যাশী হয়েছিলেন নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য –

অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা – দরবারের অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তি, বিশেষ করে মীর জাফর, রাজবল্লভ, জগৎশেঠ প্রমুখ নবাবের বিরুদ্ধে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে গোপনে ষড়যন্ত্র করছিলেন। সিরাজ তাদের এই বিশ্বাসঘাতকতার প্রমাণ (ওয়াটসের লেখা চিঠি) হাতে পেয়েও তাদের প্রকাশ্যে দোষী সাব্যস্ত করতে চাননি, বরং তাদের সংশোধনের সুযোগ দিয়েছেন।

বাহ্যিক আক্রমণের হুমকি – ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাপতি ক্লাইভের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী বাংলা আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসছিল। কলকাতা দখল, চন্দননগর আক্রমণ ইত্যাদি ঘটনায় ইংরেজদের আক্রমণাত্মক মনোভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

রাষ্ট্রীয় সংকট – বাংলার স্বাধীনতা, মর্যাদা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সিরাজ উপলব্ধি করেছিলেন যে শুধু তাঁর একার পক্ষে এই যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়। সাম্রাজ্যের সমস্ত শক্তি ও সম্পদকে একত্রিত করে একটি জাতীয় সংহতি গড়ে তুলতে হবে। তিনি দরবারের সকলের কাছ থেকে তাদের শক্তি, বুদ্ধি ও সর্বপ্রকার সহায়তা চেয়েছিলেন যাতে তারা সম্মিলিতভাবে এই সঙ্কট মোকাবেলা করতে পারেন।

৮। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো দুটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

৮.১ ‘আমার ভবিষ্যৎ।’ কাকে নিয়ে বক্তার এরূপ মন্তব্য? এই উক্তিতে বক্তার কীরূপ মনোভাব ফুটে উঠেছে তা লেখো।

উত্তর: মতি নন্দীর “কোনি” উপন্যাসের সপ্তম অধ্যায়ে ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে নিয়ে বিষ্টুচরণ ধরের কাছে এমন মন্তব্য করেন।

উক্তির মধ্য দিয়ে বক্তার যে মনোভাব ফুটে উঠেছে তা হল – দীর্ঘদিন ধরে ক্ষিতীশ সিংহ জুপিটার ক্লাবের সাঁতারের প্রশিক্ষক ছিলেন। পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে সাঁতারু গড়ে তোলাই ছিল তাঁর জীবনের প্রধান লক্ষ্য। তিনি এই কাজে ছিলেন অত্যন্ত কঠোর ও নিয়মানুবর্তী। এজন্য তিনি ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ত্যাগও স্বীকার করেছেন। কিন্তু ক্লাবের কিছু স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী মানুষের চক্রান্তের কারণে তাঁকে জুপিটার ক্লাবের সাঁতার প্রশিক্ষকের পদ ছাড়তে বাধ্য করা হয়। কোনির মধ্যে ক্ষিতীশ একজন ভবিষ্যৎ খ্যাতিমান সাঁতারু হওয়ার সম্ভাবনা দেখতে পান এবং তাকে ঘিরেই ভবিষ্যতের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা এবং কষ্ট ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণ করার তাঁর তীব্র ইচ্ছা তাঁর কথায় স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। ক্লাবের যেসব মানুষ তাঁকে অপমান করেছিলেন, যাদের চক্রান্তে তাঁর স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসেছিল, তাদের সকল ব্যঙ্গ, বিদ্রূপ, অপমান ও ষড়যন্ত্রের জবাব দেওয়ার একমাত্র উপায় ছিলেন কোনি। সাঁতারই যাঁর একমাত্র ধন, সেই ক্ষিতীশ পরাজয় স্বীকার না করে কোনির মাধ্যমে তাঁর জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছিলেন, আর সেই জন্যই তিনি বিষ্টু ধরকে উদ্দেশ্য করে এই মন্তব্য করেছিলেন।

৮.২ “ইচ্ছে থাকলেও ওকে সাঁতার শেখাবার সামর্থ্য আমার নেই।” কে বলেছিল? তার পরিচয় সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

উত্তর: মতি নন্দীর লেখা ‘কোনি’ উপন্যাসে “ইচ্ছে থাকলেও ওকে সাঁতার শেখাবার সামর্থ্য আমার নেই।” কথাটি বলেছেন কোনির দাদা কমল পাল।

কমলের পরিচয় – উপন্যাসে কমল একটি গৌণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। সে কোনির দাদা এবং কোনির জীবনে তার প্রভাব অপরিসীম। কমলের চরিত্রের বিভিন্ন দিক এই উপন্যাসে উন্মোচিত হয়েছে। কমল এক অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের যুবক। শৈশবে সেও বড় সাঁতারু হওয়ার স্বপ্ন দেখত এবং নিয়মিত অনুশীলনও করত। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর বাস্তবতা ও দারিদ্র্যের চাপে তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। কমল উপলব্ধি করেছে যে জীবন এক রণক্ষেত্র। নিজে সাঁতারু হতে না পারার জন্য তার মনে গভীর আক্ষেপ ছিল। মোটর গারেজে দেড়শো টাকা বেতনের কাজ করেও সে কোনিকে উৎসাহিত করে তারই স্বপ্ন পূরণ করতে চেয়েছে। বোনের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসা কমলের চরিত্রকে এক মানবিক রূপ দান করেছে। কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়েও সে কখনোই নিজের কষ্ট কারো কাছে প্রকাশ করেনি। ভাই-বোনদের মুখে অন্ন তুলে দিতে সে গ্যারাজে ওভারটাইম কাজ করেছে। দারিদ্র্য ছিল কমলের নিত্যসঙ্গী। অসুস্থতা তাকে আরও অসহায় করে তুলেছিল। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কোনির জন্য বেশি কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব নয় – এ কথা কমল ক্ষিতীশকে জানিয়েছে। কিন্তু তবুও সে তার স্বপ্নকে সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করতে পারেনি। “ও সাঁতার শিখুক, বড় হোক, নাম করুক”  আর্থিক অনটনের মধ্যেও সে কোনিকে সাঁতার প্রতিযোগিতায় উৎসাহিত করে। শেষ পর্যন্ত যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হয়ে কমলের মৃত্যু হয়।

৮.৩ “তবে একবার কখনো যদি জলে পাই.” কোন্ প্রসঙ্গে কার উক্তি? এখানে ‘জলে পাওয়া’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: প্রশ্নোক্ত উক্তিটি কোনির

উক্তিটির প্রসঙ্গ – ঘটনাটি একটি ক্যাম্পে ঘটছে, যেখানে ধনী ও প্রভাবশালী মেয়ে হিয়া কোনির মুখে বেলার ক্রিম মাখিয়ে দেয়। এতে কোনিকে চোর সন্দেহ করে সবাই তাকে অপমান ও শারীরিকভাবে আঘাত করে। পরে হিয়া সত্যি কথা স্বীকার করলেও কোনির অপমান ও রাগ কাটেনি। সেই রাগ ও ক্ষোভের মুহূর্তেই কোনি হিয়াকে উদ্দেশ করে বলে— “তবে একবার কখনো যদি জলে পাই…”

‘জলে পাওয়া’ বলতে বোঝানো হয়েছে – এখানে ‘জলে পাওয়া’ বলতে সাঁতার প্রতিযোগিতায় জলে কোনির সাথে হিয়ার মুখোমুখি হওয়া বোঝানো হয়েছে। কোনি নিজে দরিদ্র ও সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত, অন্যদিকে হিয়া ধনী ও প্রভাবশালী। সাঁতারে কোনি হয়তো হিয়াকে হারিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে, কিন্তু সামাজিক ও আর্থিক কারণে সে হিয়ার সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারে না। তাই ‘জলে পাই’ বলতে কোনি বোঝাতে চেয়েছে— “সাঁতার প্রতিযোগিতায় যদি কখনো তোমার সঙ্গে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাই, তখনই কেবল আমি আমার শক্তি প্রমাণ করতে পারব।” এটি একটি প্রতিশোধস্পৃহা ও আত্মসম্মানবোধ থেকে জন্ম নেওয়া উক্তি।

৯। চলিত বাংলায় অনুবাদ করো:

It is very difficult to get rid of bad habits. So, we should be very careful that we do not got into bad habits in our childhood. Idleness is one such bad habit. Every boy and girl should be diligent.

উত্তর : খারাপ অভ্যাস দূর করা খুব কঠিন। তাই আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে যেন শৈশবে খারাপ অভ্যাস না গড়ে ওঠে। অলসতা এমনই এক খারাপ অভ্যাস। প্রত্যেক ছেলেমেয়েরই পরিশ্রমী হওয়া উচিত।

১০। কমবেশি ১৫০ শব্দে যে-কোনো একটি প্রশ্নের উত্তর দাও:

১০.১ ডেঙ্গু জ্বরের বাহক মশা বিনাশের উপায় বিষয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে একটি সংলাপ রচনা করো।

উত্তর : 

ডেঙ্গু জ্বরের বাহক মশা বিনাশের উপায়

রাকিব : শোনোনি? আমাদের পাশের বাড়ির আনিকা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে!

সুমন : সত্যি? খুব খারাপ খবর। এখন তো ডেঙ্গু খুব বেড়ে গেছে। আমাদের সতর্ক থাকা দরকার।

রাকিব : ঠিক বলেছো। কিন্তু বলো তো, এই ডেঙ্গুর মশা—এডিস মশা—দূর করার উপায় কী?

সুমন : প্রথমে আমাদের বাড়ি ও আশপাশে কোথাও যেন পানি জমে না থাকে, সেটা দেখতে হবে। কারণ এডিস মশা জমে থাকা পানিতে ডিম দেয়।

রাকিব : হ্যাঁ, ফুলদানি, টব, ভাঙা হাঁড়ি–পাতিল, টায়ার—সব জায়গায় পানি জমতে দেওয়া চলবে না।

সুমন : আর সকালে ও বিকেলে মশারি ব্যবহার করতে হবে, কারণ এই সময়েই এডিস মশা কামড়ায়।

রাকিব : মশা নিধনের ওষুধও নিয়মিত ছিটাতে হবে।

সুমন : ঠিক তাই। যদি সবাই সচেতন হয়, তবে ডেঙ্গুর ভয় অনেকটাই কমে যাবে।

রাকিব : একদম ঠিক বলেছো। চল, আমরা পাড়া-প্রতিবেশীদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করি।

১০.২ তোমাদের পাড়ায় একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।

উত্তর :

রক্তদান শিবির আমাদের পাড়ায়

নিজেস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর, ১২ নভেম্বর ২০২৫; গত রবিবার আমাদের পাড়ায় “জয়বাংলা ক্লাব”-এর উদ্যোগে একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। শিবিরটি অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। এলাকার যুবক-যুবতী, মহিলা এবং প্রবীণদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডাক্তার ও নার্সরা রক্তদানের সমস্ত ব্যবস্থা করেন। মোট ৭৫ জন স্বেচ্ছাসেবক রক্তদান করেন। রক্তদাতাদের হাতে ফল, বিস্কুট ও জুস দেওয়া হয়। রক্ত সংগ্রহের পর ডাক্তাররা দাতাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ক্লাবের সভাপতি রক্তদানের গুরুত্ব সম্পর্কে সবাইকে জানান। তিনি বলেন, “এক ফোঁটা রক্ত একজন মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে।” শিবির শেষে সবাই প্রতিজ্ঞা করেন, প্রতি বছর অন্তত একবার রক্তদান করবেন। এই রক্তদান শিবিরটি আমাদের পাড়ার মানুষের মধ্যে মানবসেবা ও সামাজিক সচেতনতার নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

১১। কমবেশি ৪০০ শব্দে যে-কোনো একটি বিষয় অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা করো:

১১.১ পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা।

উত্তর:  

পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা

আমাদের পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় জলাভূমি এক অনন্য সম্পদ। নদী, খাল, বিল, হ্রদ, পুকুর, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদি সবই জলাভূমির অন্তর্ভুক্ত। এগুলি শুধু জলধারণের স্থান নয়, বরং জীববৈচিত্র্য, জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ এবং মানবজীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। কিন্তু আজকের দিনে এই জলাভূমিগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। অথচ পরিবেশ রক্ষায় এদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত, জলাভূমি প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে কাজ করে। বর্ষাকালে যখন অতিবৃষ্টি হয়, তখন জলাভূমি অতিরিক্ত বৃষ্টির জল ধারণ করে বন্যার প্রকোপ কমায়। আবার গ্রীষ্মকালে এই জল ধীরে ধীরে আশপাশের এলাকায় সরবরাহ হয়, ফলে মাটির আর্দ্রতা বজায় থাকে। এভাবে জলাভূমি প্রাকৃতিকভাবে জলচক্রের ভারসাম্য রক্ষা করে।

দ্বিতীয়ত, জলাভূমি হলো জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল। অসংখ্য প্রজাতির মাছ, উভচর প্রাণী, পাখি, উদ্ভিদ ও অণুজীব জলাভূমির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। এটি খাদ্যশৃঙ্খল ও পরিবেশব্যবস্থাকে সুস্থ রাখে।

তৃতীয়ত, জলাভূমি প্রাকৃতিক ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। নদী বা বৃষ্টির জলের সঙ্গে আসা ক্ষতিকর রাসায়নিক ও দূষক পদার্থ জলাভূমির উদ্ভিদ ও মাটির মাধ্যমে ছেঁকে নেওয়া হয়। ফলে ভূগর্ভস্থ জলের মান উন্নত হয় এবং পানিদূষণ কমে।

চতুর্থত, জলাভূমি কার্বন শোষণ ও জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জলাভূমির উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে, যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং রোধে সহায়ক।

পঞ্চমত, জলাভূমি মানুষের জীবিকাতেও সহায়তা করে। কৃষি, মাছচাষ, নৌপরিবহন এবং পর্যটন শিল্প জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল।

কিন্তু দুঃখের বিষয়, শহরায়ণ, শিল্পায়ন ও বর্জ্য ফেলার কারণে জলাভূমি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। অনেক জলাভূমি ভরাট করে বাড়িঘর ও কারখানা তৈরি হচ্ছে, ফলে পরিবেশ ভারসাম্য মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

তাই আমাদের কর্তব্য হলো জলাভূমি সংরক্ষণে এগিয়ে আসা। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ—সবাইকে একযোগে উদ্যোগ নিতে হবে। নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা অভিযান, সচেতনতামূলক প্রচার ও আইনি সুরক্ষা জলাভূমি রক্ষায় অত্যন্ত প্রয়োজন।

জলাভূমি আমাদের পরিবেশের “প্রাকৃতিক ফুসফুস”। এদের সংরক্ষণ মানে প্রকৃতি ও মানবজীবনের টিকে থাকা নিশ্চিত করা। তাই আজই আমাদের শপথ নিতে হবে — “জলাভূমি বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও।”

১১.২ তোমার চোখে, তোমার বিদ্যালয়।

উত্তর : 

 আমার চোখে, আমার বিদ্যালয়

আমার বিদ্যালয়ের নাম শান্তিনিকেতন উচ্চ বিদ্যালয়। এটি আমাদের এলাকার একটি সুপরিচিত ও প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়টি একটি সুন্দর ও নিরিবিলি জায়গায় অবস্থিত। চারদিকে গাছপালা, ফুলের বাগান আর খোলা মাঠ ঘিরে রয়েছে আমাদের প্রিয় বিদ্যালয়টিকে। প্রতিদিন সকালে ঘণ্টা বাজতেই ছাত্রছাত্রীদের কোলাহলে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে।

আমাদের বিদ্যালয়ে মোট প্রায় এক হাজার ছাত্রছাত্রী ও কুড়ি জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। তাঁরা সবাই খুব আন্তরিক ও পরিশ্রমী। তাঁরা শুধু বইয়ের পাঠই দেন না, আমাদের নৈতিকতা, শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম ও মানবতার পাঠও শেখান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুবই স্নেহশীল এবং শৃঙ্খলাপ্রিয় মানুষ। তিনি সবসময় আমাদের উৎসাহ দেন ভালোভাবে পড়াশোনা ও খেলাধুলা করতে।

আমাদের বিদ্যালয়ের ভবনটি তিনতলা বিশিষ্ট। নিচতলায় আছে অফিস, লাইব্রেরি ও বিজ্ঞানাগার। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় রয়েছে শ্রেণিকক্ষগুলো। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষ পরিপাটি, বাতাস চলাচলের উপযোগী এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। বিদ্যালয়ের মাঠটি খুব বড়, যেখানে আমরা প্রতিদিন খেলাধুলা করি—ক্রিকেট, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ক্যারম, ইত্যাদি। প্রতি বছর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। সেই দিনটি আমাদের সবার সবচেয়ে প্রিয় দিন।

বিদ্যালয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজেরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। রক্তদান শিবির, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, জাতীয় দিবস পালন ইত্যাদি নানা সামাজিক কর্মসূচিতে আমরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিই। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা দায়িত্ববোধ ও সমাজসেবার শিক্ষা লাভ করি।

আমার বিদ্যালয়ের একটি বিশেষ দিক হলো, এখানে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে এক ধরনের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। আমরা সবাই একে অপরকে সাহায্য করি, শ্রদ্ধা করি এবং একসাথে শিখি। বিদ্যালয়ের পরিবেশ এতটাই শান্ত ও আনন্দময় যে প্রতিদিন স্কুলে যেতে আমার খুব ভালো লাগে।

আমার মনে হয়, বিদ্যালয় শুধু শিক্ষালাভের জায়গা নয়—এটি আমাদের চরিত্র গঠনের, মানুষ হয়ে ওঠার স্থান। এই বিদ্যালয়ই আমাকে শৃঙ্খলা, দায়িত্ববোধ ও সহযোগিতার মূল্যবোধ শিখিয়েছে।

তাই আমি গর্ব করে বলতে পারি —“আমার চোখে আমার বিদ্যালয়ই আমার জীবনের প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষালয়।”

১১.৩ সমাজগঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা।

উত্তর :  

সমাজগঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা

বর্তমান যুগে গণমাধ্যম বা Mass Media আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র, ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যম—সবই গণমাধ্যমের অন্তর্ভুক্ত। গণমাধ্যম শুধু তথ্য প্রচারের মাধ্যম নয়, এটি সমাজের চেতনা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ গঠনের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। সমাজগঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।

প্রথমত, গণমাধ্যম মানুষের জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধি করে। দেশ-বিদেশের খবর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি, অর্থনীতি ও রাজনীতি—সবই আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি। ফলে সাধারণ মানুষ শিক্ষিত ও সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। সামাজিক অন্যায়, দুর্নীতি, অপরাধ বা পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যাগুলোকে প্রকাশ্যে এনে গণমাধ্যম সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে।

দ্বিতীয়ত, গণমাধ্যম সমাজে একতা ও সম্প্রীতি রক্ষা করে। একটি দেশের মানুষকে একই চিন্তার স্রোতে যুক্ত করে জাতীয় সংহতি বৃদ্ধি করে। দুর্যোগ, মহামারী বা সংকটের সময় গণমাধ্যম মানুষকে তথ্য দেয়, সচেতন করে এবং সাহায্যের হাত বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করে। উদাহরণস্বরূপ, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় গণমাধ্যমের প্রচারণা মানুষকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে সাহায্য করেছিল।

তৃতীয়ত, গণমাধ্যম সমাজের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নাটক, গান, সাহিত্য, সিনেমা ও নানারকম অনুষ্ঠান আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরে। আবার, নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম, মানবতা, ও নৈতিকতার শিক্ষা দিতেও এটি কার্যকর মাধ্যম।

তবে গণমাধ্যমের কিছু নেতিবাচক দিকও আছে। অতিরঞ্জিত বা ভুয়া সংবাদ, গুজব ও নেতিবাচক প্রচার সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তাই গণমাধ্যমের উচিত দায়িত্বশীলভাবে সত্য ও নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন করা।

সবশেষে বলা যায়, গণমাধ্যম আধুনিক সমাজের আয়না। এটি সমাজকে চিনতে, গঠন করতে ও উন্নতির পথে পরিচালিত করতে সাহায্য করে। দায়িত্বশীল ও সৎ গণমাধ্যমই পারে এক উন্নত, সচেতন ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে।

উপসংহার:

সমাজগঠনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গণমাধ্যম যদি সত্য, ন্যায় ও মানবতার পক্ষে কাজ করে, তবে তা সমাজে আলোর দিশা দেখাতে সক্ষম হবে।

১১.৪ একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী।

উত্তর : 

একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী

বিজ্ঞান মানে হলো অনুসন্ধান, যুক্তি আর নতুন আবিষ্কারের পথে চলা। বাঙালিরা সবসময়ই জ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞানচেতনায় এগিয়ে এসেছে। তাঁদের মধ্যেই একজন শ্রেষ্ঠ বাঙালি বিজ্ঞানী হলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। তিনি শুধু ভারতের নয়, সারা বিশ্বের কাছে একজন মহান বিজ্ঞানী ও উদ্ভাবক হিসেবে শ্রদ্ধার আসন লাভ করেছেন।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর ময়মনসিংহ জেলার রাঢ়িকান্দি গ্রামে। তাঁর পিতা ভগবানচন্দ্র বসু ছিলেন এক সমাজসংস্কারক। ছোটবেলা থেকেই জগদীশচন্দ্র ছিলেন কৌতূহলী এবং প্রকৃতিপ্রেমী। তিনি প্রথমে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়েন এবং পরে ইংল্যান্ডে গিয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করেন। দেশে ফিরে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন।

বিজ্ঞানচর্চার পাশাপাশি তিনি গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে উদ্ভিদও প্রাণীর মতো অনুভব করতে পারে—তাদেরও ব্যথা, আনন্দ ও স্পন্দন আছে। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি উদ্ভিদের জীবনীশক্তি মাপার একটি যন্ত্র তৈরি করেন, যার নাম ক্রেসকোগ্রাফ (Crescograph)। তাঁর গবেষণা জীববিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে।

তাছাড়া, জগদীশচন্দ্র বসু তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ (Microwave) ও তরঙ্গবিজ্ঞানে (Radio science) গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। তিনি রেডিও আবিষ্কারের কাজ করেন মারকোনির আগেই, কিন্তু নিজের স্বার্থের জন্য নয়, জ্ঞানের কল্যাণের জন্যই তিনি তাঁর আবিষ্কারকে মানবজাতির সম্পত্তি হিসেবে উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন—যা ছিল ভারতীয় বিজ্ঞানীর জন্য এক বিরল সম্মান।

জগদীশচন্দ্র বসুর জীবনে ছিল বহু প্রতিকূলতা, কিন্তু তিনি কখনও হার মানেননি। নিজের অধ্যবসায় ও গবেষণাপ্রেম দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, ভারতীয়রাও বিশ্বমানের বিজ্ঞানচর্চা করতে পারে।

১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর এই মহান বিজ্ঞানী মৃত্যুবরণ করেন। আজও তাঁর প্রতিষ্ঠিত বোস ইন্সটিটিউট (Bose Institute) বিজ্ঞানচর্চার এক অনন্য কেন্দ্র হিসেবে বিদ্যমান।

আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু আমাদের শেখান—জ্ঞান, অধ্যবসায় ও মানবকল্যাণই সত্যিকারের বিজ্ঞানীর লক্ষ্য। তিনি শুধু একজন বিজ্ঞানী নন, তিনি আমাদের জাতির গর্ব, আমাদের প্রেরণা।


MadhyamikQuestionPapers.com এ আপনি অন্যান্য বছরের প্রশ্নপত্রের ও Model Question Paper-এর উত্তরও সহজেই পেয়ে যাবেন। আপনার মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এই গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ কেমন লাগলো, তা আমাদের কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। আরও পড়ার জন্য, জ্ঞান অর্জনের জন্য এবং পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য MadhyamikQuestionPapers.com এর সাথে যুক্ত থাকুন।

Tag Post :
Share This :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *